Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে শহিদ রফিকের ব্যবহৃত জিনিস

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৩৯

ভাষা শহিদ রফিকের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, চেয়ার ও টেবিল, ছবি: সারাবাংলা

মানিকগঞ্জ: জেলার সিংগাইরে ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহম্মদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে রফিকের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, দু’টি চেয়ার, একটি টেবিল ও নিজ হাতে কারু কাজ করা টেবিল ক্লথ। দীর্ঘ ১৫ বছর প্রতীক্ষার পর এসব জিনিস জাদুঘরটিতে রাখা হয়। যা দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সের মানুষ।

তবে গ্রন্থাগারে ভাষা শহিদদের উপর লেখা বইয়ের স্বল্পতা রয়েছে। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে মাতৃভাষার অনেক তথ্য। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নতুন প্রজন্মের অনেকেই।

ভাষা আন্দোলনে প্রথম শহীদ হয়েছেন মানিকগঞ্জের রফিক উদ্দিন আহম্মদ। জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে তার জন্ম। পরবর্তীতে গ্রামটির নামকরণ করা হয় রফিক নগর। ২০০০ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পেয়েছেন এই সূর্য সন্তান।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৪ মে জেলা পরিষদ রফিক নগরে নির্মাণ করে ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহম্মেদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। শুরু থেকেই পাঠাগারে কিছু বই এবং ছবি দিয়ে সাজানো হলেও জাদুঘরে দেওয়া হয়নি রফিকের ব্যবহৃত জিনিসগুলো। প্রতিবছরই ফেব্রুয়ারি মাস এলেই সরগরম হয়ে ওঠে জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি। বছরের বাকি সময় থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে শহিদ রফিক পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তার ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো জাদুঘরে সংরক্ষিত করার দাবি করে আসছিল এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা।

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

তবে দেরিতে হলেও সম্প্রতি শহিদ রফিকের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, নিজের হাতে কারু কাজ করা টেবিল ক্লথ, দুটি চেয়ার ও একটি টেবিল জাদুঘরে দান করে তার পরিবার। একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে এসব জিনিস দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে জাদুঘরে ছুটে আসছেন মানুষ।

সরজমিন শহিদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের ভিড়। তারা প্রথমবারের মতো জাদুঘরে শহিদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো দেখতে পেয়ে আনন্দিত তারা। তবে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন ভাষা শহিদদের উপর লেখা পর্যাপ্ত বই না থাকায়। অথচ গ্রন্থাগারের ১৬ হাজার বই রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছরই একুশে ফেব্রুয়ারির আগে ভাষা শহিদ রফিকের গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে আসি। কিন্তু এসে অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরে যাই। শহিদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো দেখার ইচ্ছা বহুদিন ধরে। সেই ইচ্ছে দীর্ঘদিনেও পূরণ হয়নি। তবে এবার জাদুঘরে এসেই দেখতে পাই রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো দেখে পেয়ে প্রাণটা জুড়িয়ে যায়।’

মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ‘শহীদ রফিকের ব্যবহৃত জিনিসগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণে আনার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। দেরিতে হলেও আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। তবে ভাষা শহিদদের উপর লেখা কিছু বই এখানে থাকলেও তা পাঠকের চাহিদা মেটাতে পারছে না। যার কারণে মাতৃভাষা ও ভাষা সৈনিকদের সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের অজানাই রয়ে গেছে। গ্রন্থাকারে দ্রুত ভাষা শহিদ এবং মাতৃভাষার ওপর লেখা বেশি বেশি বই আনার দাবি করছি।’

শহিদ রফিক গ্রন্থাগার ও জাদুঘর পরিদর্শনে এসেছেন লেখক ও গবেষক মিয়াজান কবীর। তিনি বলেন, ‘ভাষা শহিদ রফিকের নামে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার গড়ে উঠলেও সেখানে প্রদর্শনী করার মতো কোনো ডকুমেন্টস সেভাবে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে দর্শনার্থী বা শিক্ষার্থী যারাই এখানে আসেন, তারা হতাশ হয়ে আবার ফিরে যান। আমি মনে করি ভাষা শহিদ রফিকের নামে জাদুঘর এবং গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বই-পুস্তক এবং ভাষা আন্দোলনের দলিল দিয়ে এটাকে সমৃদ্ধ করা জরুরি।’

ছবি: সারাবাংলা

ছবি: সারাবাংলা

শহিদ রফিক গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রত্যাশার পর শহিদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতিগুলো গ্রন্থাগার ও জাদুঘরে আনার কারণে দর্শনার্থীদের চাহিদা মিটেছে। এখানে প্রায় ১৬ হাজার বই রয়েছে। তবে এখানে যেসব দর্শনার্থীরা আসছেন তাদের বেশিরভাগ চাহিদাই থাকছে ভাষা শহিদদের উপর লেখা বইয়ের প্রতি। ভাষা শহিদদের উপর অল্প সংখ্যক বই থাকায় পাঠকের চাহিদা মেটাতে পারছি না।’

ভাষা শহিদ রফিকের ছোট ভাই খোরশেদ আলম বলেন, ‘দেরিতে হলেও শহিদ রফিকের ব্যবহৃত পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, তার হাতের কারু কাজ করা টেবিল ক্লথ, দুটি চেয়ার ও একটি টেবিল জাদুঘরে দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছি। শহিদ রফিক জাদুঘর ও পাঠাগার কর্তৃপক্ষ অনেকদিন ধরেই আমাদের তাগিদ দিয়ে আসছিল। নানা কারণেই রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো দেওয়া দেরি হয়।’

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘শহিদ রফিকের ব্যবহৃত স্মৃতি চিহ্নগুলো জাদুঘরে দেওয়ার জন্য তার পরিবারের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই অনুরোধ করেছিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর হলেও শহিদ রফিকের ব্যবহৃত জিনিসগুলো জাদুঘরে পেয়ে দর্শনার্থীদের চাহিদা মেটাতে পেরেছি। এজন্য শহিদ রফিকের পরিবারকে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।’

সারাবাংলা/এনএস

ভাষা শহিদ রফিক উদ্দিন আহম্মদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর মানিকগঞ্জ সিংগাইর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর