১৪৪ ধারা ভঙ্গে অগ্রভাবে ছিলেন নারীরা, ‘নাম নেই’ ইতিহাসে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৭
ঢাকা: ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার মিছিলে অংশ নেন শতাধিক ছাত্রী। তারা ছিলেন অগ্রভাগে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার ও লাঠিচার্জে সেদিন আহত হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু ভাষা আন্দোলেনর ইতিহাসে জোরেসোরে উচ্চারিত হয় না তাদের নাম।
তমুদ্দুন মজলিস কমিটির অন্যতম সদস্য ও তৎকালীন সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ভাষা সৈনিক অধ্যাপক আব্দুল গফুরের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অধ্যাপক আব্দুল গফুরের স্মৃতিচারণ থেকে জানা গেছে, ওই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজ থেকে ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় উপস্থিত হন। ১০ জন করে মিছিলের অগ্রভাগে ছিল ছাত্রীরা। রওশন আরা বাচ্চু, চেমন আরা, নিলুফার ইয়াসমিন, সৈয়দা আনোয়ার হোসেনের নাম উঠে আসে। অধ্যাপিকা চেমন আরার বয়স এখন ৯০ এর উপরে। তিনি তার কর্ম জীবন শেষ করেন সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে। প্রফেসর সুফিয়া আহমেদ, হালিমা বেগম, প্রতিভা মুৎসুদ্দি, নিলুফার ইয়াসমিন কর্মজীবন শেষ করেন বেসরকারি ব্যাংক থেকে।
এ ছাড়া ২০ ফেব্রুয়ারি ৯৪ নবাবপুর রোডে বৈঠকে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন, শামসুল হক, তোয়াহা, অলি আহাদ, শামসুল হক চৌধুরী, কাজী গোলাম মাহবুব, খালেক নেওয়াজ খান, নূরুল আলম, মির্জা গোলাম হাফিজ, মুজিবুল হক, হেদায়েত হোসেন চৌধুরী, আব্দুল মতিন, প্রফেসর আবুল কাসেম, আব্দুল গফুর, শওকত আলী, ইব্রাহীম তাহা, সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, আখতার উদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রয়ারি মিছিলের পুরোভাগেই ছিলেন ছাত্রীরা। মিছিল যখন বেরিয়ে পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়ে যাচ্ছিল তখন নারীদের অংশগ্রহণ ছিল পূর্ণমাত্রায়। ওই আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের নাম তেমন শোনা যায় না ।
১৯৫২ সালের ২১ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিষয়ে ইতিহাস থেকে জানা যায়, এখনকার ডেন্টাল কলেজের আশেপাশে কনস্ট্রাকশন ফার্মের ইট-পাটকেল ছিল। জায়গাটি ছিল খোলা । ওই দিন পুলিশের একটা ব্যাটালিয়ান সেখানে উপস্থিত হয়ে সামনের রাস্তা ঘেরাও করে দাঁড়ালে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিকেল ৩টার পর সেখানে ঢাকার অ্যাডিশনাল এসপি মাসুদ উপস্থিত হয়ে গুলির অর্ডার দিয়ে চলে যান। বিকেল চারটার সময় গেটের ভেতরে ঢুকে আকস্মিকভাবে গুলি করতে শুরু করে পুলিশ। ঘটনাস্থলে নিহত হন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। আহত হন ২০ জন। এঁরা একজনও ছাত্রনেতা বা বিপ্লবী ছিলেন না।
সন্ধ্যা ৭টায় প্রতিবাদী ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়। এ সময় শহিদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র বরকত। রাত আটটায় আহতদের মধ্যে মারা যান আবদুল জব্বার ও রফিকউদ্দিন আহমদ। শহরে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোতায়েন করা হয় সৈন্য। গ্রেফতার হন ৯১ জন। এই ৯১ জনের মধ্যেও কয়েকজন ছাত্রী ছিলেন বলে জানা যায়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/একে