রাশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২০
ঢাকা: বাংলাদেশের বন্দরে রাশিয়ার জাহাজ প্রবেশে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে রাশিয়া।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী রাশিয়ার জাহাজ দেশটির বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়ে দেশটির কূটনৈতিক মিশনের প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম নিয়ে আসা রুশ জাহাজ ‘উরসা মেজর’ অনুমতি না পাওয়ায় পণ্য খালাস না করেই ভারতীয় জলসীমা থেকে ফিরে যায় গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার যেসব জাহাজ মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে, সেসব নৌযানের বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশে গত ১৬ জানুয়ারি নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গত সপ্তাহে ঢাকায় নিয়োজিত রুশ রাষ্ট্রদূত তাদের নিশ্চিত করেছেন।
দূতাবাস আরও জানায়, এই পদক্ষেপের মানে এই নয় যে, রাশিয়ার মালামাল আমদানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
পরে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর থেকে দেশটির মালিকানাধীন অনেক জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো।
নিষেধাজ্ঞায় থাকা রাশিয়ার একটি জাহাজে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জাম পাঠায় দেশটি। উরসা মেজর নামের রাশিয়ার পতাকাবাহী একটি জাহাজে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পণ্য নিয়ে ২৪ ডিসেম্বর মোংলা বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।
তবে তার আগেই ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায় যে ওই জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা–৩ এ’ জাহাজ। যাচাই করে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়। গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য বলছে, জাহাজটি এখনো বঙ্গোপসাগরের ভেসে বেড়াচ্ছে।
তবে গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিকের ১৫ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী, জাহাজটি তখন বঙ্গোপসাগরে ভারতের অংশে মাঝ সমুদ্রে নোঙর অবস্থান ছিল। রুট পরিবর্তন করে চীনের সায়েনথো বন্দরে গন্তব্য সুনির্দিষ্ট করেছিল। যা গত ৩১ জানুয়ারি চীনের বন্দরটিতে পৌঁছানোর কথা ছিল।
এদিকে নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজের পণ্য খালাস নিয়ে মার্কিন পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে এক প্রকার সতর্ক করা হয়েছে। অন্যদিকে জাহাজের পণ্য খালাস করতে না দিলে তা দুই দেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ঢাকাকে ডিসেম্বরে জানিয়েছিল ঢাকার রুশ দূতাবাস।
ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার মান্টিটস্কিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে বলা হয়, এর আগে নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত জাহাজে রাশিয়া থেকে মালামাল পাঠানো হয়েছে, আগামীতেও একইভাবে সরঞ্জাম পাঠাতে হবে।
সারাবাংলা/এসবি/এনএস