Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বজনদের বাঁচিয়ে সুইমিং পুলে লাফিয়ে পড়া শামা এখন আইসিইউ-এ

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:০৭

ঢাকা: রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কের ২ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১৪ তলা ভবনের ১১ তলায় আগুন লাগে রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায়। এক পর্যায়ে আগুন ভবনের ১২ তলায় ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির এই ১২ তলাতেই থাকতেন জাতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও আবাহনী ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক ফাহিম সিনহা ও তার পরিবার।

আগুনের অ্যালার্ম বেজে ওঠার সময় বাসায় ছিলেন ফাহিম সিনহা’র স্ত্রী শামা রহমান সিনহা, তার এক ছেলে, দুই মেয়ে ও মা নাগিনা আফজল সিনহা। এছাড়াও ছিলেন বাসায় বাবুর্চির কাজ করা ৩২ বছর বয়সী রাজু, ২২ বছর বয়সী রোজিনা আক্তারসহ রিনা আক্তার নামে আরেক গৃহকর্মী।

আগুনের অ্যালার্ম বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শামা রহমান তার তিন সন্তান ও শাশুড়িকে লিফটে করে নিচে পাঠিয়ে দেন। সেইসঙ্গে গৃহকর্মী রিনা আক্তারকেও নিরাপদে পাঠিয়ে দেন তিনি। এরপর ১২তলা থেকে লিফটে নিচে নামার চেষ্টা করেন শামা রহমান। তবে সাত তলায় পৌঁছানোর পরে লিফট বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় লিফট থেকে বের হয়ে ৭ম তলার বেলকনির পাশে গিয়ে দাঁড়ান শামা রহমান।

এক পর্যায়ে আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকলে সেখান থেকেই ভবনের নিচে থাকা সুইমিংপুলে লাফিয়ে পড়েন। এর পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। স্বজনদের রক্ষা করতে পারলেও বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন শামা রহমান সিনহা।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তবে তার পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কামুক্ত নয়। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, সাত তলা থেকে লাফ দেওয়ার কারণে শামা রহমানের মেরুদণ্ডের পাশের হাড় ভেঙে গেছে। মস্তিষ্ক ভালো থাকলেও ফুসফুসে সমস্যা রয়েছে। শ্বাসতন্ত্রে আগুনের ধোঁয়া আর ফুসফুসে সুইমিং পুলের পানি ঢুকে যাওয়ায় তার অবস্থা গুরুতর হয়।

হাসপাতালে থাকা তার একাধিক স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শামা রহমান আগুনের অ্যালার্ম শোনার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানসহ শাশুড়ি ও অন্যান্যদের নিরাপদ স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজে সেখান থেকে নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারেননি।

শামা রহমানের গৃহকর্মী রিনা আক্তার জানান, আগুন লাগার সময় ১২ তলাতেই ছিলাম। হঠাৎ করে বাবুর্চি বলে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, সবাই আগুন আগুন বলে চিৎকার করছে। এমন সময় অ্যালার্মও বেজে উঠে। ম্যাডাম অ্যালার্ম শোনামাত্র আমাদের নিচে নামিয়ে দেন। প্রথমে বুঝি নাই ম্যাডাম কেমন আছে? পরে মানুষজন বলছিল উনাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তিনি নাকি বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়েছিলেন। আমাদের সবাইকে নিরাপদে বের করতে পারলেও উনি নিজেকে আর বিপদমুক্ত রাখতে পারেননি।

আগুন লাগা ভবনের সামনেই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় একমি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে গাড়ি প্লেস করার পর দূর থেকে পানি দিলেও তাতে কোনো কাজ হচ্ছিল না। আমরা গাছ কেটে পানির পাইপ বাসার দিকে দিতে বলছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না।

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময়েও ভাবি (শামা রহমান) দাঁড়িয়ে ছিলেন বেলকনিতে। আমরা নিচ থেকে দেখছিলাম ১০ তলা থেকে আগুন একদম লাল হয়ে ১১ তলার দিকে যাচ্ছে, এরপরে ১২ তলায়। সেই সময় বেলকনির শেষপ্রান্তে ভাবিকে দেখা যায়। আনোয়ার আর রাজুও সেখানে ছিল। পরে তারা লাফ দেয়।

শামা রহমানের চিকিৎসায় সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক (বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ) অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়ালকে সভাপতি করে ২৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডা. রায়হানা আওয়াল জানান, ২৫ সদস্যের এ মেডিকেল বোর্ডে ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেনসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক, জেনারেল সার্জারি ও থোরাসিক সার্জারি চিকিৎসকরা আছেন।

মেডিকেল বোর্ডের অন্যতম সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইসমে আজম জিকো সারাবাংলাকে বলেন, ‘শামা রহমান সিনহার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওপর থেকে লাফ দেওয়ার কারণে মেরুদণ্ডের পাশের হাড় ভেঙে গেছে। তার মস্তিষ্ক ভালো আছে। তবে ফুসফুসে সমস্যা রয়েছে।’

ডা. সামন্ত লাল সেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শামা রহমান এখনো ঝুঁকিমুক্ত নন। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বোর্ডে নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিকসহ অন্য জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা রয়েছেন। তারাও তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।’

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দু’জনই ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ হারান। তারা হলেন- আনোয়ার হোসেন ও রাজু। দু’জনই সিনহা পরিবারের বাবুর্চি ছিলেন। এদের মধ্যে লাফিয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান ৩০ বছর বয়সী আনোয়ার হোসেন। আর রাত ৩টার দিকে গুলশানের জেড এইচ শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যু হয় ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ রাজিব ওরফে রাজুর।

অগ্নিকাণ্ডে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে গুলশান থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এদিকে, মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার আবদুল আহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন ভবনটির বাইরে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।’

তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভবনটি নিরাপদ কি না, তা জানাবেন। তারা নিরাপদ ঘোষণা করলেই কেবল বাসিন্দারা ভবনে ফিরতে পারবেন।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

গুলশান অগ্নিকাণ্ড শামা রহমান সিনহা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

এখনো সালমানকে মিস করেন মৌসুমী
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৩

সালমান শাহ্‌কে হারানোর ২৮ বছর
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪

সম্পর্কিত খবর