‘উন্নয়নের কথা ঘরে ঘরে পৌঁছান, ক্ষমতা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না’
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:২১
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে কাজগুলি করেছি এলাকাভিত্তিক বা দেশের জন্য, শুধু সেই কথাগুলিই যদি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারেন তাহলে আমাদের ভোটের আর কোনো সমস্যা নাই। আর এই ক্ষমতাও কেউ আর কেড়ে নিতে পারবে না। আর যাই হোক, ওই দানবদের হাতে আমরা বাংলাদেশের জনগণকে ফেলে দিতে পারি না।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় করোনাভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্টি অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মোকাবিলার মাধ্যমে টানা সরকার পরিচালনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করেছি, এটা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আজকে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে গেছে। শুধু ঢাকা শহর না সমগ্র বাংলাদেশেই আমরা উন্নয়ন করতে পেরেছি।
বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। বাংলাদেশকে এখন আমরা উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলবো। সেই পরিকল্পনাটাও দেওয়া আছে। কিন্তু এর জন্য দরকার জনগণের ভোটের অধিকার, আওয়ামী লীগই সেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির জন্মই হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। যে সংগঠনের জন্ম অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে যে ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে যে সংগঠন গড়ে উঠেছে সেটাও তো অবৈধ। কাজেই দেশবাসী যেন সেটাকে অবৈধ বলেই প্রত্যাখান করে, দেশবাসীর কাছে আমরা সেটাই আবেদেন। কারণ ওরা এদেশের মানুষের কোনো কল্যাণও চায় না মঙ্গলও চায় না। ওরা দেশটাকে ক্ষমতায় থাকতে খুবলে খুবলে খেয়ে গেছে। সংবিধানকে তারা কলুষিত করেছে। আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। একটা জাতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার সবকিছুই তারা করেছিল।’
‘আজকে ১৪ বছরে আমরা সেখান থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে একটা বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে বাঙালি অধিষ্ঠিত, অন্তত এইটুকু আমরা করতে পেরেছি। এখন আর বাংলাদেশকে কেউ ভিক্ষুকের জাতি মনে না। এখন বাংলাদেশকে কেউ কারো কাছে হাত পাতার জাতি মনে না। এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল মনে করে, এটা মাথায় রাখতে হবে।’
উন্নয়নকে ধরে রেখেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে এবং সারাদেশে জনগণের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকের নিজের এলাকা আছে। ঢাকা শহরেও আপনারা এক একটা এলাকায় বসবাস করেন। আমরা যে কাজগুলি করেছি, এলাকাভিত্তিক বা দেশের জন্য। শুধু সেই কথাগুলিই যদি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারেন তাহলে ভোটের আর কোনো সমস্যাও আমাদের নাই। আর এই ক্ষমতাও কেউ আর কেড়ে নিতে পারবে না। এটা মাথায় রাখবেন। আমরা আর যাই হোক ওই দানবদের হাতে বাংলাদেশের জনগণকে ফেলে দিতে পারি না।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান সুরক্ষা, জীবনমান উন্নত করা, বাংলাদেশকে যেভাবে আমরা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ঠিক রেখে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু ওদের হাতে ক্ষমতা গেলে এই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও ওরা ধ্বংস করে দেবে। সেটাই সবাইকে মাথায় রাখতে হবে এবং সেইভাবে আপনাদের সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।’
একদিকে যেমন সংগঠন করতে হবে তেমনি মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়নের বার্তাটাও পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি নিজেদেরকেও তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, তার উপর আমেরিকার স্যাংশনের ফলে উন্নত বিশ্বে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক মন্দা। আমরাও তার জন্য ভুক্তভোগী। অত্যন্ত কষ্ট করে আমাদের অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি দাবি করে তিনি বলেন, প্রত্যেকের যার যেখানে জমি আছ এক ইঞ্চি জমি অনাবাদী থাকবে না। যে যা পারবেন উৎপাদন করবেন। কারো কাছে খাদ্যের জন্য আমরা হাত পাতব না। আমরা আমাদের নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করবো। নিজেদের চাহিদা মেটাবো। পাশাপাশি অন্য দেশকেও আমরা সহযোগিতা করতে পারি সেই ভাবেই আমরা চলবো।’
ক্ষমতাসীন দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদেরও এই আহ্বান মেনে চলার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। এই বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। এই বাংলাদেশকে ইনশাআল্লাহ উন্নত দেশ করবো। শহিদের রক্ত বৃথা যায় না। বৃথা যায়নি। বৃথা যাবে না। আর ওই দুবৃর্ত্তরা কোনদিন যেন এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। আমরা সেটা খেলতে দেব না। আজকের দিনে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায়বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশিষ্টজনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য নির্মল চ্যাটার্জী, মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। আর বিশিষ্টজনদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, চিত্রনায়ক ফেরদৌস।
সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ