Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তেজগাঁও ট্র্যাক স্ট্যান্ডে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার চাঁদা বাণিজ্য!

রাজনীন ফারাজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:০৪

ঢাকা: ২১ একর জায়গা নিয়ে তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড। ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার যানবাহনের। যদিও পালাক্রমে প্রতিদিন ট্রাক, মিনিভ্যান, কাভার্ডভ্যান ইত্যাদি মিলিয়ে যানবাহন আসে আট হাজার। এসব যানবাহনকে ১২ ঘণ্টার জন্য গুনতে হয় ২৪০ টাকা করে। এতে প্রতিদিন ওই স্ট্যান্ডে চাঁদা বাণিজ্য হয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। আর এই টাকা যাচ্ছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিকদের তিন সংগঠনের কাছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচাপণ্যের আড়ৎ কারওয়ান বাজার। এই বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্য নিয়ে আসা হাজার হাজার ট্রাক পণ্য খালাস করার পর অবস্থান নেয় এই তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে। পাশাপাশি শিল্পাঞ্চল এলাকায় পণ্য খালাস করতে আসা ট্রাকের গন্তব্যও এটিই। এছাড়াও ঢাকার মধ্যে থাকা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানও রাখা হয় রাজধানীর এই একমাত্র ট্রাক স্ট্যান্ডে। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে আসা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের প্রয়োজন না হলেও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ট্রাক শ্রমিকদের বিশ্রাম, খাওয়া ও অবস্থানের একমাত্র জায়গাও এটি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, দিনের বেলা ঢাকার মধ্যে পণ্য পরিবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলার অনুমতি না থাকায় এখানেই আসতে হয় তাদের। এই অবস্থায় যে কয়েক ঘণ্টাই থাকা লাগুক না কেন, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকরা বাধ্য হয়েই তেজগাঁওয়ে আসেন। আর এতে ১২ ঘণ্টার জন্য গুণতে হয় ২৪০ টাকা। যদিও তারা মানি রিসিট পান মাত্র ১৪০ টাকার। বাকি ১০০ টাকার কোনো রিসিট দেওয়া হয় না। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তেজগাঁও স্ট্যান্ডে আসা একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে একথা জানা যায়, ১০০ টাকা নেওয়া হয় গার্ডের বেতন বাবদ।

জানা গেছে, আগে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তার ওপর ট্রাক, কাভার্ডভ্যান রাখা হতো। কিন্তু ২০১৫ সালে রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তিনি মারা যাওয়ার পর ট্রাক স্ট্যান্ড করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওই ২১ একর সম্পত্তি বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদকে দেওয়া হয়। পরে স্ট্যান্ডের উন্নয়ন করে দেয় ডিএনসিসি। তার পর থেকে এটি পরিচালনা বাবদ ওই তিন সংগঠন যানবাহন প্রতি ১৪০ টাকা করে নিয়ে আসছে।

রিসিট অনুযায়ী, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ উন্নয়ন সার্ভিস চার্জ বাবদ ১০০ টাকা ও নিরাপত্তা প্রহরীর দৈনিক সার্ভিস চার্জ বাবদ ২০ টাকা নেওয়া হয়। আর বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন নাইট গার্ড/পাহারাদার/শ্রমিক কল্যাণ বাবদ নেয় ২০ টাকা।

ট্রাক স্ট্যান্ডের আশপাশে কাজ করা কয়েকজন পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেল, এখানে ২৪০ টাকা দিয়ে ট্রাক রাখা লাগে। যদিও রিসিটে ১৪০ টাকা লেখা। কিন্তু বাকি ১০০ টাকা কি জন্য দিচ্ছেন? এমন প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রাক ড্রাইভার বলেন, এই টাকা গার্ডের বেতন বাবদ নেয়।

জানা গেছে, ট্রাক স্ট্যান্ডে রাত ও দিন মিলিয়ে ১৫ জন গার্ড কাজ করেন। তাদের প্রত্যেকের আনুমানিক বেতন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে যদি প্রত্যেক গার্ড ১৫ হাজার টাকা বেতনও পায় সেই বাবদ মাসিক খরচ হওয়ার কথা ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু এখানে গার্ডের বেতন বাবদ মাসে তোলা হচ্ছে ৪৮ লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, যারা চাঁদা তোলেন তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিউল্লাহ শফি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির ও কাউন্সিলর শফি। শফিউল্লাহ শফি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে চান্দা ওঠে কি না আমি জানি না। এখানে সব নেতারা আছে, মালিক সমিতি আছে, শ্রমিক নেতারা আছে। এখানে চান্দা উঠায়ে কে খায় তা আমি জানি না। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা।’

বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ১৪০ টাকা নিয়ে থাকি ট্রাকপ্রতি। একশ টাকা টারমিনাল ফি বাবদ, ২০ টাকা শ্রমিক ফেডারেশনের চাঁদা আর নাইট গার্ডের জন্য ২০ টাকা। এর বাইরে এক টাকাও অতিরিক্ত নেওয়া হয় না।’

রিসিট ছাড়া একশ টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি সত্য নয়। কেউ কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না।’ তাদের সংগঠনের প্রতিপক্ষরা এটি বলে থাকতে পারে বলে জানান মনির।

সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম

চাঁদা বাণিজ্য ট্রাক স্ট্যান্ড তেজগাঁও

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর