মাঠে ফসল ফলানো গৌরবের, লজ্জার বিষয় না: প্রধানমন্ত্রী
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:২৭
ঢাকা: যুব সমাজকে কৃষিকাজে বেশি বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো অত্যন্ত গৌরবের বিষয়, এটা লজ্জার বিষয় না। সেভাবেই আমাদের দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। যেটা খেয়ে জীবন বাঁচবে সেই কাজ করা লজ্জার না, সেটা গর্বের।’
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫০বছর পূর্তি ও বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গবেষণা ছাড়া কখনও উৎকর্ষতা সাধন করা যায় না। আমাদের কৃষি নির্ভর দেশ। তাই আমরা কৃষি গবেষণার উপর গুরুত্ব দিয়েছি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখে আর মাঠে যেতে চায় না। এমনকি বাবা কৃষক ছিলো সেটা বলতেও লজ্জা পেত। আজ কিন্তু আর সেই লজ্জাটা নাই। সে লজ্জাটা আমরা ভেঙে দিয়েছি।’
করোনাকালে ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধান কাটতে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থ্যাৎ যেটা খেয়ে জীবন বাঁচবে সেই কাজ করা লজ্জা না, সেটা গর্বের। কাজেই মানসিকতার পরিবর্তন একান্ত প্রয়োজন ছিল। আজ অনেক পরিবর্তন হয়েছে বিশ্বাস করি।’
যুব সমাজকে কৃষিকাজে আরও বেশি বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঠে কাজ করা বা ফসল ফলানো, অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। এটা লজ্জার বিষয় না। সেভাবেই দেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে জনসংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে আমরা খাদ্য উদ্বৃত্ত হিসাবে ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। ২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসে। ২০০৮-এ নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ আমাদের মহাজোট জয়ী হই। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়।’
‘২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন দেখি ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি। সে কারণে পুনরায় কৃষি গবেষণা, উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের সার বীজ সরবরাহ, কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেই। ফলে সেই অন্ধকার যুগ কাটিয়ে আমরা এখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শুধু ধান উৎপাদন না, ধানের সঙ্গে তরকারি-ফলমূল সবকিছু উৎপাদনেও কিন্তু বাংলাদেশ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী হচ্ছে। বাংলাদেশেও উদ্ভাবন করতে হবে। আমাদের জলবায়ুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আরও নতুন উদ্ভাবন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চাই আমাদের দেশে এগিয়ে যাবে। আমরা আর পিছনে ফিরে তাকাব না।’
‘আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে। কাজেই বাংলাদেশ যেটা পারে, সেটা আমরা আজ প্রমাণ করেছি। আমাদের দু’জন অতিথি বিদেশ থেকে এসেছে, তাদের বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। তারা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। বাংলাদেশ আজ একটা সম্মান নিয়ে সারাবিশ্বে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এভাবেই এগিয়ে যাবে; সেটাই আমরা চাই। আমরা চাই, এই বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে, বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গাজীপুর পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর বঙ্গবন্ধু-পিয়েরে ট্রুডো কৃষি প্রযুক্তি কেন্দ্রের বিভিন্ন উদ্ভাবন পরিদর্শন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কানাডার গ্লোবাল ইনস্টিটিউট অব ফুড সিকিউরিটির (সিইইউ) নির্বাহী পরিচালক ড. স্টেভিন ওয়েব, ফিলিপাইনের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিচার্স ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর জেনারেল ড. জেইন বালিই, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার।
সারাবাংলা/এনআর/এমও