Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৯

ঢাকা: পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বনানী সেনা কবরাস্থানে নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, এই ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত ছিল, সেটা হয়নি। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, সেনা বাহিনী একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, সেটা দেশবাসী জানতে পারেনি।’

‘পরবর্তীকালে আমরা দেখেছি- দুই বিষয়ে বিচার হয়েছে। একটি হল বিদ্রোহ এবং হত্যা, আরেকটি হলো বিস্ফোরক। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ হাজারের মতো সৈনিক, যারা অনেকে দাবি করেন যে, তারা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। তাদের কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলাটার শুনানি শেষ করা হয়নি’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমি কিছু দিন আগে কারাগারে ছিলাম। সেখানে দেখেছি অনেক সাবেক বিডিআরের সদস্য, যাদের এই মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারা ১৩/১৪ বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের সমস্ত ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, জুডিশিয়ারি সমস্যাগুলো অতিদ্রুত সম্পাদন করে তাদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। বিষয়গুলো দেখে, এই মানুষগুলোকে তাদের পরিবার পরিজনের কাছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।’

বিজ্ঞাপন

পিলখানার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এই দিনে সেই সমস্ত চৌকস কর্মকর্তা যারা আমাদের সম্পদ ছিলেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মর মাগফেরাত কামনা করছি। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার-পরিজন ছাড়া অন্যান্য যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রতিও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’

বিএনপি মহাসচিব বিডিআরের ঘটনায় নিহত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভুঁইয়ার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে যান।

পিলখানার ঘটনায় সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার চক্রান্ত করা হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দিনটি দুঃখজনক ও কলঙ্কের দিন। এ দিনের আমাদের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নৃশংসভাবে পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয় এবং একটা ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। এটা (পিলখানার হত্যাকাণ্ড) একটা চক্রান্ত ছিল দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিরুদ্ধে, আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে ফেলার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি অত্যন্ত ভয়াবহ চক্রান্ত, একটা ষড়যন্ত্র এদেশের বিরুদ্ধে এই জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আমাদের সার্বভৌমত্ব, আমাদের স্বাধীনতা প্রচণ্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও এত সেনা কর্মকর্তা হারাইনি।’

বিজ্ঞাপন

২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দিন সকাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের এই বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীন একটা কমেন্ট। এতো বড় একটা ঘটনা, যে ঘটনায় আজকে সমস্ত জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেই ঘটনাগুলো যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি (খালেদা জিয়া) এই দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বাংলাদেশের সেনা প্রধান, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন।’

‘তিনি এদেশে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সারাটার জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এখনো কারাবরণ করেছেন, অন্তরীণ হয়ে আছেন। সুতরাং এসব কমেন্ট একেবারেই ডায়ভারসন করা। ওনাদের সমস্যাটা হচ্ছে, ওনারা মূল সমস্যায় না গিয়ে সব সময় অন্য দিকে যেতে চান। কারণ, এই ঘটনাগুলো তারা সেভাবে সমাধান করতে পারেননি’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সমস্ত সংকটের মূলে রয়েছে গণতন্ত্র। এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করা, একটি সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু অবাধ, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সংকটগুলোর সমাধান করতে পারব।’

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জহুরুল আলম, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফয়সাল, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নাল আবেদীন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সৈয়দ কামরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর মিজানুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিয়াজ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর কোহিনুর আলম নূর, অবসরপ্রাপ্ত ফ্লাইট লেফট্যান্টে হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া ও জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনএস

পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর