চালু হয়নি ‘মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র’, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৪৫
ভৈরব: নির্মাণের দেড় বছরেও চালু না হওয়ায় ভৈরবে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কোনো কাজে আসছে না। নির্মাণের দেড় বছর পরও কোনো ব্যবসায়ী না আসায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার যে শর্ত দিয়েছে, তা মেনে ব্যবসা করা সম্ভব না।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীরা যেন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে ব্যবসা করেন সেজন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। তারা আশা করছেন ব্যবসায়ীরা এখানে আসবে এবং এটি শিগগিরই চালু হবে।
ভৈরবে পুরাতন মেঘনা ফেরিঘাটে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে মৎস্য অধিদফতর ২০ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় নির্মাণ করেছে ৪তলা বিশিষ্ট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। ২০১৮ সালে নির্মাণ কাজ শুরু করে ভবন নির্মাণ শেষে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনের উদ্বোধন করা হয়।
অবতরণ কেন্দ্রটি ২৭ শতাংশ ভূমির উপর নির্মিত হয়েছে। ভবনের চর্তুদিকে সীমানা প্রাচীর, অকশন শেড, প্যাকিং শেড, ৩৫টি আড়ত ঘর, ১টি আইসপ্লান্ট, সোলার প্যানেল, কোয়ালিটি কন্ট্রোলার, গভীর নলকূপ, আইস ক্রাসার ও জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় নির্মিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের প্রায় ২ বছর পার হলেও এখনও কোনো ব্যবসায়ী অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে আসছেন না।
অন্যদিকে পুরাতন নৈশ মৎস্য আড়তে ১৫০ জন আড়তদার রয়েছেন। প্রতিটি আড়তের সঙ্গে রয়েছে মাছ রাখার পর্যাপ্ত জায়গা ও প্রসেসিং করার মতো বরফ কলসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। বর্তমানে অবতরণ কেন্দ্রে ১ জন ব্যবস্থাপক, ১ জন ল্যাব কন্টোলার ও ১ জন নাইট গার্ড রয়েছেন।
মৎস্য আড়তদার ইব্রাহিম মিয়া, গোলাম রসুলম আনোয়ার হোসেনসহ অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ব্যবসা করতে হলে ২ লাখ টাকা অগ্রিম, মাসে ২ হাজার টাকা করে ভাড়া আর বিক্রিত মাছের শতকরা দেড় টাকা কমিশন দিতে হবে সরকারকে। এসব শর্তে ব্যবসা করলে তাদের আর্থিক ক্ষতি হবে। ব্যবসা টিকানো যাবে না। এছাড়া অবতরণ কেন্দ্রে মাছ রাখা বা প্রসেসিং করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা (মাঠ) নেই।
শুধু তাই নয়, আগের মতো মিঠা পানির মাছ এখন আড়তে আসে না। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সরাসরি হাওর-বাওর বা নদীর মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। তাই ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি, পুরাতন নৈশ মৎস্য আড়তে নিজেদের ভিটেয় ৩০/৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করায় কোনো ভাড়া লাগে না। আর এখানকার সরবরাহ করা মাছ বিদেশে কিছুটা রফতানি করায় কোনরকমে আড়তদাররা টিকে আছে বলেও তারা জানান।
ভৈরব মৎস্য আড়তদার মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, ‘সরকার যে শর্ত দিয়েছে, সেসব শর্ত দিয়ে অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না। তাছাড়া এখন আগের মতো আড়তে মাছ আমদানি না হওয়ায় নিজস্ব ভিটেতে কোনোরকমে ব্যবসা করে আমরা টিকে আছি।’
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেন অবতরণ কেন্দ্রে এসে ব্যবসা করে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমরা আশা করছি ব্যবসায়ীরা অবতরণ কেন্দ্রে এসে ব্যবসা করবে এবং এটি চালু হবে।’
সারাবাংলা/এমও