৯ বছরে হজ খরচ বেড়েছে ১৩১ শতাংশ!
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪৮
ঢাকা: করোনা মহামারির পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু অতি মাত্রায় খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইচ্ছা থাকার পরও হজে গমনেচ্ছুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে সময় বাড়িয়েও মিলছে না হজযাত্রী। বরং কেউ কেউ নিবন্ধন বাতিল করছেন। তুলে নিচ্ছেন জমা দেওয়া টাকাও। ফলে এবার বাংলাদেশের হজ কোটা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আরেক দফা সময় বাড়ানোর চিন্তা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এবার হজযাত্রায় সরকারিভাবে জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৮ টাকা ফি নির্ধারণ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর বেসরকারিভাবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- হাব। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। অর্থাৎ এ বছর উভয় পর্যায়েই প্যাকেজ ফি বেড়েছে দেড় লাখ টাকা। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা। গত নয় বছরে এই খরচ বেড়েছে ১৩১ শতাংশ বা দ্বিগুণেরও বেশি।
আর এ কারণেই এবার হজ কোটা পূরণ হচ্ছে না। ফলে পাঁচ দিন সময় বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তাতেও মিলছে না সাড়া। আর এ কারণে ফের নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সুত্রানুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
প্যাকেজ ঘোষণার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রাক নিবন্ধিত গমনেচ্ছুদের নিবন্ধন শেষ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে আশানুরূপ নিবন্ধন না করায় ২২ ফেব্রিয়ারি রাতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দিন সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
নতুন জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের হজের হজযাত্রী, হজ এজেন্সি এবং সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সৌদি সরকার এ বছর হজযাত্রীদের ভিসার ক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক ভিসা পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। এই পদ্ধতির অধীনে ভিসার আবেদন সাবমিট করার জন্য ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় সকল পস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নতুন এ পদ্ধতিতে ভিসা করার জন্য পাসপোর্ট আপাতত নিজের কাছে সংরক্ষণ করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করে যারা এরই মধ্যে ঢাকার আশকোনার হজ অফিসে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন, ভিসা কার্যক্রম শুরু হলে তারা সেখানে গিয়ে বায়োমেট্রিক ভিসার আবেদন করতে পারবেন। অথবা সেখান থেকে পাসপোর্ট নিয়ে অন্য কোনো সেন্টারে থেকেও ভিসার আবেদন করতে পারবেন। ভিসা কার্যক্রম শুরু হলে ভিসা সাবমিট সেন্টার এবং ভিসার পদ্ধতি সকলকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এছাড়া, হজযাত্রী নিবন্ধনের নির্ধারিত সময় আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সূত্র জানায়, হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরের দিন থেকে অনেকে নিবন্ধন শুরু করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ হাজার জনের কোটার বিপরীতে ব্যালটি ও নন ব্যালটি মিলিয়ে মাত্র ১৭ হাজার জন হজ যাত্রী নিবন্ধন করেছেন। জানা গেছে, গত দুই তিন দিন ধরে নিবন্ধন করার পরে তা বাতিল করছেন। আবার টাকাও তুলে নিচ্ছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৮ তারিখের মধ্যে কোটা পূরণ না হলে নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ানো হতে পারে। আর তা হতে পারে ১০ মার্চ পর্যন্ত।
সূত্র মতে, চলতি বছর হজের জন্য কোরবানির খরচ ছাড়া প্যাকেজ ধরা হয়েছে সরকারি ভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা আর বেসরকারিভাবে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। কোরবানিসহ ওই ব্যয় সাত লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যা মধ্যবিত্তদের জন্য বহন করা কষ্টসাধ্য।
জানা গেছে, হজ খরচ বাড়ার অন্যতম কারণ বিমান ভাড়া। ২০১৫ সালে হজের সর্বনিম্ন খরচ ছিল ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা, ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা, ২০১৭ সালে ৩ লাখ ১৯ হাজার, ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর মাঝে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা মহামারির জন্য হজ পালন বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে হজ প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। আর চলতি বছরে করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৮ টাকা। গত পাঁচ বছরে হজ যাত্রায় ব্যয় বেড়েছে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৫ টাকা। সঙ্গে বেড়েছে বিমান ভাড়া।
বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকরা বলছেন, এবার হজের খরচ বেড়েছে নজিরবিহীন। নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি মানুষ হজে যেতে প্রাক নিবন্ধন করেন। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। খরচ বাড়ার কারণে প্রাক নিবন্ধন করলেও বাড়ছে না নিবন্ধন সংখ্যা। তারা বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে। হয়তো ফের বাড়াবে। যদি খরচ না কমায় তাতে কোনো লাভ হবে না। তারা আরও বলছেন, মানুষের ইচ্ছা থাকার পরও খরচ বাড়তি হওয়ায় হজে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সেজন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় বিমানভাড়াসহ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে হাব’র সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে টানা দুই বছর হজযাত্রা বন্ধ ছিল। এবার হজ পালনের সুযোগ পেলেও খরচ বেড়ে গেছে অত্যাধিক। ডলার আর তেলের দামের অজুহাত দেখিয়ে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ জ্বালানির দাম সেভাবে বাড়েনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাব সবসময় হজের খরচ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। আমরাও চাই হজের খরচ পূর্নর্বিবেচনা করা হোক।’
উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম