ফের চবি’র চারুকলা ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:২৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের দাবিতে ১২০ দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের মধ্যেই চারুকলা ইনস্টিটিউট আবারও এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ সই করা বিজ্ঞাপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, গত ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ৫৪২তম সভায় (জরুরি সভা) নেওয়া ‘সিদ্ধান্ত-১’ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরে অবস্থিত একাডেমিক ভবন, আবাসিক হোস্টেল, অন্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। চলমান উন্নয়ন ও সংস্কার কাজসমূহ সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে গঠিত কমিটির সময় বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির কার্যকাল আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিধি-নিষেধ বলবৎ থাকবে। এগুলো হলো- আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে এবং এ সময়ে অনলাইন ক্লাস চালু থাকবে, ইনস্টিটিউটের আওতাধীন শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলও ৩০ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাস ও হোস্টেল বন্ধ থাকাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষার্থী চারুকলা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জহির রায়হান অভি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবারও একমাস ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। প্রশাসন চাচ্ছে যে, আমাদের আন্দোলন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাক। সে কারণে আবারও একমাস বন্ধ ঘোষণা করছে। আমরা আপাতত ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।’
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) চারুকলা ইনস্টিটিউট আগামী এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
উল্লেখ্য, ঝুঁকিমুক্ত ক্লাসরুম, ভবন ও ছাত্রাবাস নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের জন্য বাস, ডাইনিং ও ক্যান্টিন চালুসহ ২২ দফা দাবিতে ২০২২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আন্দোলনে নামেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। ৩ নভেম্বর থেকে তারা চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার এক দফার আন্দোলন শুরু করেন।
প্রায় আড়াই মাস ধরে টানা আন্দোলনে অচল হয়ে থাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে গত ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর আন্দোলনকারীদের নিয়ে ফটক খুলে চারুকলার ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে তাদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে ক্লাসে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে ২২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউটে যান। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা সাতদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরেন।
সাত দিনের ক্লাস শেষে তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে ফটকে তালা লাগিয়ে ক্লাস ছেড়ে ফের আন্দোলনে নামেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
১৯৬৯ সালে শিল্পী রশিদ চৌধুরীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধীনে ‘সহায়ক’ বিষয় হিসেবে শিল্পকলা বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চারুকলা শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে রশিদ চৌধুরীকে বিভাগীয় প্রধান নিযুক্ত করার মধ্য দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। চারুকলা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের লক্ষে চারুকলা বিভাগ হিসেবে এটি চালু করা হয়। শুরুতে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ড. আবদুল করিম ভবনে এই বিভাগের সব কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
পরে ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ৪৬২তম সিন্ডিকেট সভায় ৮৬ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চারুকলা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজকে একীভূত করার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালের ২ আগস্ট চারুকলা ইনস্টিটিউট ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর বাদশাহ মিয়া চৌধুরী সড়কে বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
আরও পড়ুন:
চবি চারুকলা বন্ধ, ক্লাস অনলাইনে
ক্যাম্পাস ছেড়েছেন চবি চারুকলা শিক্ষার্থীরা, ছাত্রাবাস সিলগালা
সারাবাংলা/সিসি/এমও