‘পদ্মা সেতুর মতো দেশকে গড়ে তুলে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব’
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:২১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষ আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী হবে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের উন্নতি করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ঠিক যেভাবে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি, সেই ভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলব। সেটাই চাই।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কিশোরগঞ্জে নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি এবং গত ১৪ বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার লক্ষ্য সামনে নিয়ে তার আদর্শেই পথ চলছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলছি। এই বাংলাদেশে একটি মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না। প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
এ সময় তিনি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমার সমস্যার সমাধনাসহ সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করারও প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্যের বিষয় করোনা অতিমারির ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। তার উপরে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের দেশে এখনও অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
‘যেহেতু খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। এমনকি অনেক উন্নত দেশে খাদ্য কিনতে গেলে তারা রেশন করে দিচ্ছে। যেমন, কয়েকদিন আগে শুনলাম ইংল্যান্ডে দু’টির বেশি টমোটো কেনা যাবে না আর একটার বেশি শসা কেনা যাবে না। বিদ্যুতের মূল্য ১৫০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঠিক এভাবে অনেকে দেশে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে যেন সে অবস্থা না হয়। সে জন্য আহ্বান করেছি এক ইঞ্চি জমি আমরা অনাবাদি রাখবো না। সকল অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনবো। আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করবো। দরকার হলে অন্যান্য দেশে সহযোগিতা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে হবে। মন্দার ভাব যেন আমাদের উপর না আসে তার জন্য সতর্কভাবে চলতে হবে। মিতব্যয়ী হতে হবে। সঞ্চয়ী হতে হবে। আমাদের বিদ্যুৎ গ্যাস পানি তেল যা কিছু সব কিছু ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে।’
‘আমরা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক। আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। এরইমধ্যে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ। সারা বাংলাদেশে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার, ব্রডব্যান্ড, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, তথ্য প্রযযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করছি, সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে আমাদের যারা ভবিষ্যৎ বংশধর তারা যেন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সে পদক্ষেপও নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশের মানুষ আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী হবে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমরা এই দেশ পেয়েছি। আমরা জতি হিসাবে বিশ্ব সভায় উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে গড়ে তুলব এবং বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে চলব। কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের উন্নতি করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। ঠিক যেভাবে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি ঠিক সেইভাবে আমরা দেশকে গড়ে তুলব। সেটাই আমি চাই।’
সেনানিবাস নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতিও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সেনানিবাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সঙ্গে ছিলেন। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সকালে কিশোরগঞ্জে নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১১টা ২০ মিনিটে সেনানিবাস উদ্বোধন করে মোনাজাতে অংশ নেন তিনি। পরে তিনি সেনানিবাস এলাকায় আম গাছের চারা রোপণ করেন। আবদুল হামিদ সেনানিবাসটি ২৭৫ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে।
বিকেলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিবেন। এ ছাড়া এ সফরে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করবেন। আজ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে সকাল ১১টা ৫ মিনিটে মিঠামইনে রাষ্ট্রপতির বাড়ির পাশে ঘোড়াউত্রা নদীর চরে নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে মিঠামইন সফর করলেও তৎকালীন সংসদ সদস্য ও ডেপুটি স্পিকার আবদুল হামিদের বাড়িতে যেতে পারেননি শেখ হাসিনা। সেখানে আতিথেয়তা গ্রহণ শেষে বিকেলে মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন।
দীর্ঘ দুই যুগ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিঠামইন গেলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে কেন্দ্র করে হাওড়ে উৎসমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে সেখানে মিঠামইনে অবস্থান করছেন রাষ্ট্রপতি।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ