Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেষ হলো চট্টগ্রাম বইমেলা, বড় প্রকাশকের স্টলে ভালো বিক্রি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১ মার্চ ২০২৩ ০৯:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে ২১ দিনের অমর একুশে বইমেলা শেষ হয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবার বই বিক্রি অন্যান্যবারের তুলনায় ভালো হয়েছে। তবে মেলায় যে লোকসমাগম হয়েছে, বিক্রি সে তুলনায় হয়নি। আরও বড় পরিসরে মেলা আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রকাশকরা।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, শেষবেলায় পাঠকরা ব্যস্ত পছন্দের লেখকের বই কিনতে। ঘুরছেন স্টল থেকে পাশের স্টলে। কেউ মত্ত আড্ডায় আবার কেউ বইয়ের ছবি তুলতে।

বিজ্ঞাপন

পাঠকদের মতে, এবার বইয়ের দাম বেশি হওয়ায় অনেক পাঠক বিশেষত শিক্ষার্থীরা আগ্রহ থাকলেও বই কিনতে পারেননি। কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানসম্মত বই প্রকাশ করতে গিয়ে দাম সাশ্রয়ের কথা ভাবতে পারেননি বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা।

বাতিঘর প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির আগের সময়ের হিসাব করলে অর্থাৎ ২০২০ সালের চেয়ে এবার বই বিক্রি বেশি হয়েছে। তবে মেলা কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ, স্টল দেওয়ার ক্ষেত্রে উনারা যেন আরেকটু সিলেক্টিভ হন। এবার অনেক ভূঁইফোড় প্রকাশনাকে স্টল দেওয়া হয়েছে। একটি সিলেক্টিভ বইমেলার আগ্রহ আছে প্রকাশক এবং পাঠকদের।’

চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী চৌধুরী ফাহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবারের বইমেলা যে একদম জমেনি সেটা বলা যাবে না। পাঠক অনেক এসেছেন, তবে বই কিনেছেন কম। চট্টগ্রামের বইমেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বইমেলা। কিন্তু এখানে পাঠকরা ভালোভাবে হাঁটতেও পারে না। আরও বড় পরিসরে মেলা করার কথা ভাবতে হবে আয়োজকদের।’

বিজ্ঞাপন

বইমেলার ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বইমেলার আগেরদিন স্টল বুঝিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। প্রকাশকদের স্টল গোছাতেই ৩-৪ দিন সময় লাগে। পরিকল্পনা নিয়ে বইমেলা করতে হবে।’

বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেলায় এবার আমাদের প্রকাশনা থেকে ৪৭টি নতুন বই বের হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট চার লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।’

বলাকা প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবারের বই বিক্রি কম হয়েছে। ছুটির দিনে যেভাবে মেলায় ভিড় হতো, এবার তেমন দেখা যায়নি। এবার মাত্র ৫০০টি বই বিক্রি করতে পেরেছি। সব মিলিয়ে ৮০ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে।’

সাহিত্য বিচিত্রার প্রকাশক সোহেল রানা বলেন, ‘বই বিক্রি ভালো হয়েছে। তবে পাঠকের সংখ্যা কম ছিল। তরুণরা এসে বই দেখছে, পড়ছে এটা একটি ভালো দিক। এবার একটু প্রচারণার ঘাটতি ছিল। সব মিলিয়ে এবার প্রায় ছয় লাখ টাকার মতো বই আমাদের বিক্রি হয়েছে।’

বইমেলায় এবার ছিল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বুকস্টল। চট্টগ্রামের অনেক সাংবাদিকের বই ছিল এই স্টলে। প্রতিদিনই এখানে ভিড় লেগে থাকত সাংবাদিকদের।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বইমেলায় এবার প্রথম প্রেসক্লাব থেকে স্টল দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার টাকার বই বিক্রি হয়েছে। তবে আমাদের শুধু বই বিক্রিই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। বইমেলায় অংশগ্রহণের মতো সৃজনশীল কর্মকাণ্ডকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই।’

সমাপনী দিনে বইমেলার মঞ্চে ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রকাশকদের মাঝে সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ।

চট্টগ্রামের বইমেলাকে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের পরামর্শ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করতে হলে তাদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির কবলে বইয়ের জায়গা কেড়ে নিয়েছে অনলাইন সামাজিক মাধ্যম। নতুন প্রজন্মকে গড়তে হলে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বইগুলো তাদের হাতে তুলে দিন। আগামীতে এই বইমেলাকে আরও বড় পরিসরের আয়োজনের জন্য মঞ্চনাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সংযুক্ত করতে পারলে ভালো হবে।’

আবৃত্তিশিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘বইয়ের চোখে ইতিহাস দেখেন পাঠকরা। বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীনের মতো বইগুলোর মাধ্যমে পাঠকরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছে, বুঝতে পারছে তৎকালীন ঐতিহাসিক বাস্তবতা।’

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বই মানুষকে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে বই ভূমিকা রেখেছে। মেয়র হিসেবে বীর চট্টলাবাসীর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে এই বইমেলার আয়োজন করেছি আর আগামী বছর এ বইমেলার প্রাঙ্গণ আরও বড় করব।’

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আয়োজনে বইমেলা শুরু হয়েছিল।

সারাবাংলা/আইসি/আইই

চট্টগ্রাম বইমেলা বইমেলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর