মন্দা অর্থনীতিতেও ৮ মাসে রেমিট্যান্স দেড় লাখ কোটি টাকা
২ মার্চ ২০২৩ ০০:০৬
ঢাকা: করোনা পরবর্তী বিশ্বজুড়ে মন্দা অর্থনীতি এবং ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের মাঝেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন আশা দেখা দিয়েছে। দেশজুড়ে তীব্র ডলার সংকটের মাঝে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে সুবাতাস বহন করছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম ৮ মাসে (জুলাই-২২ থেকে ফেব্রুয়ারি-২৩) প্রবাসীরা ১৪ দশমিক ০১২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার ১০৭ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-২১ থেকে ফেব্রুয়ারি-২২) রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে মুদ্রায় এর পরিমাণ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মন্দা অর্থনীতেত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে ডলার সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করতো।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে দেশে ব্যাপক মূলস্ফীতি দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার ব্যাপক সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রবাসীদের একটা বড় অংশই হলো নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দেশের এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রবাসীরা তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য নিজেরা খেয়ে না খেয়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। যা দেশের অর্থনীতিতে বড়ধরনের ভূমিকা রাখছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের নানা প্রণোদনার কারণেও রেমিট্যান্স বেড়েছে। অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এটা ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রণোদনা আরও বাড়াতে হবে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া দেশের অর্থনীতি অচল। দেশের অর্থনীতি ঠিকিয়ে রেখেছে রেমিট্যান্স আর গার্মেন্টস। এই দুইটা ছাড়া বাংলাদেশ অচল।’
তিনি বলেন, ‘গত আট মাসে ১৪ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। এটা ২৪ বিলিয়ন হতো পারতো। কিন্তু রেমিট্যান্সের অর্থও বিদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি, চাঁদাবাজী এবং অনিয়ম-লুটপাট কমাতে হবে। প্রবাসী ও তাদের পরিবাররে নানাধরনের প্রণোদনা বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ডলার সংকটের মাঝে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে দেশের অর্থনীতিদ মুখ থুবরে পড়তো। এক কথায় বলব ,মন্দা অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স দেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে।’
এদিকে সদ্য বিদায়ী ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা ১৫৬ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা জানুয়ারির তুলনায় কিছুটা কম। গত জানুয়ারিতে প্রবাসীরা ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। তবে সদ্য বিদায়ী ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৪৯ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার।
অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৪৯ কোটি ২২ লাখ ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা দুই হাজার ১০৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স
সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এছাড়া, ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার, ২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম