Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আউটার স্টেডিয়ামে বন্ধ হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ মার্চ ২০২৩ ২২:৪৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামে কোনো ধরনের মেলা করতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রায় তিন দশক ধরে এই মাঠে ঐতিহ্যবাহী ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যার সূচনাকারীদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াত রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বিজয়মেলার আয়োজকরা জেলা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের মধ্যে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন।

খেলার মাঠকে ‘মেলামুক্ত’ করার তোড়জোড়ের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বিজয়মেলা, পণ্যমেলাসহ কোনো ধরনের মেলাই আর আউটার স্টেডিয়ামে হতে পারবে না। এর পরিবর্তে মেলার জন্য শহরতলীতে দু’টি জায়গা তারা প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছেন।

জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান বলেন, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামে উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের কোনো খেলার মাঠে আর মেলা করতে দেয়া হবে না। বিজয় মেলাসহ সব ধরনের মেলার জন্য আলাদা ভেন্যুর বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।’

‘আমরা প্রাথমিকভাবে পতেঙ্গায় বে-টার্মিনালের যে প্রস্তাবিত স্থান তার উল্টোদিকে সিডিএ’র একটি মাঠ আছে সেটি নির্ধারণ করেছি। সলিমপুরে আমাদের যে ফ্লাওয়ার পার্ক হয়েছে তার পাশে সাত একর একটা জায়গা আছে। সেটা আমরা বাণিজ্যমেলার জন্য তৈরি করে দেব। সেখানে বিজয়মেলাও হবে।’

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনূস সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিজয়মেলা ওরা (প্রশাসন) আর আউটার স্টেডিয়ামে করতে দেবে না বলে আমরা শুনেছি। প্রথমে আমরা মেলা করতাম সার্কিট হাউজের পাশে মাঠে। সেখানে শিশুপার্ক করে ফেলা হয়েছে। এরপর আমরা আউটার স্টেডিয়ামে শুরু করি। প্রায় ৩০ বছর ধরে করে আসছি। সেখানে সুইমিং পুল বানিয়ে মাঠের অর্ধেক দখল করে ফেলা হল। এখন মাঠেই আর মেলা করতে না দেয়ার যে সিদ্ধান্ত সেটাকে আমরা ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করি।’

জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে পরিষদ করণীয় নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ ইউনূস।

‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বীর বাঙালির অহংকার’ এই স্লোগান নিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে বিজয়ের মাসে চট্টগ্রামে আয়োজিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা।

মেলা শুরুর আগে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের সামনের চত্বরে ‘বিজয়শিখা’ প্রজ্বলন করা হয়। মাসব্যাপী চলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

চট্টগ্রামের একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী মিলে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের উত্তাল সময়ে এই বিজয়মেলা শুরু করেছিলেন। পরে মেলা ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘসময় ধরে মেলার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। প্রয়াণের পর মহিউদ্দিনের সন্তান মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিজয়মেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (দুপুরে) চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে নিয়ে আউটার স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।

এ সময় তিনি জানান, আউটার স্টেডিয়ামের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে সংস্কার করা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমানা নির্ধারণের পর শুরু হবে সংস্কার কাজ। সংস্কারের অর্থ ব্যয় করবে সিজেকেএস। একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে সার্ভেয়ার দিয়ে আউটার স্টেডিয়ামের মাপ নিয়ে লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে মাঠের জায়গায় দুইটি রেস্তোঁরাসহ কিছু স্থাপনা আছে।

পদাধিকার বলে সিজেকেএস’র সভাপতি জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান বলেন, ‘অনুমতি নিয়েই রেস্টুরেন্টগুলো করা হয়েছে। তাদের ইনভেস্টমেন্টের একটা বিষয় আছে। সেগুলো সরিয়ে নিতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে। তারপর মাঠের চারপাশে সীমানা পিলার দিয়ে কাজ শুরু হবে।

আউটার স্টেডিয়ামের পাশাপাশি জিমনেসিয়াম মাঠও সংস্কার এবং ১৫টি উপজেলায় আরও ১৯১টি মাঠ নির্মাণ করা হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামে ক্রীড়াচর্চার মধ্য দিয়েই দেশের অনেক তারকা ক্রিকেটার ও ফুটবলার তৈরি হয়েছে। তবে বছরজুড়ে বিভিন্ন মেলা, অবৈধভাবে গাড়িসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ফেলে রাখা এবং সংস্কারের অভাবে মাঠটি অনেকটাই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে এখন খেলাধূলার সুযোগ নেই বললেই চলে।

আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সীমানা নির্ধারণের পর আউটার স্টেডিয়ামে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে, যাতে করে অবৈধ ব্যবহারকারীরা মাঠে প্রবেশ করতে না পারে। প্রফেশনাল কিউরেটর এবং গ্রাউন্ডসম্যানদের সহায়তা ও পরামর্শে খেলাধূলার উপযোগী করে আউটার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কাজ করা হবে। ড্রইং ডিজাইন সম্পন্ন হলেই বাজেট নির্ধারণ এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার অর্থায়নেই এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।’

নগরীর রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠও জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফখরুজ্জামান।

পলোগ্রাউন্ড মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেলে সেখানে অ্যাথলেটিক্স ট্রার্ফ বসিয়ে নিয়মিত অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সারাবাংলা/আরডি/একে

বিজয়মেলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর