দুর্গম পাহাড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়!
৩ মার্চ ২০২৩ ১১:১০
বান্দরবান: গত কয়েক মাস ধরে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ও নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামায়াতুল আনসার হিল ফিন্দাল শারক্বিয়া’র বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর লাগাতার অভিযান ও গোলাগুলির আতঙ্কে বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে শিশু শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসায় রুমা উপজেলার বেশ কয়েকটি দুর্গম এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুমার পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরথাহ্ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসত্লাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেমাক্রিপ্রাংসা ইউনিয়নের পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুননুয়াম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জেসপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কয়েকটি বন্ধ রয়েছে এবং বন্ধের পথে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়।
রুমার কয়েকজন অভিভাবক জানান, বর্তমানে এলাকায় খারাপ পরিস্থিতির কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে সবাই ভয় পাচ্ছে। এ কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে সবাই।
তারা আরও জানান, যাদের সামর্থ্য আছে তারা অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েদের জেলা বা সদর উপজেলায় পড়াশোনার জন্য পাঠাচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা গরীব, তাদের পরিবারের পক্ষে বাইরে লেখাপড়া করানো সম্ভব না। এতে গরীবরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
বিভিন্ন পাড়ার কারবারী ও স্থানীয়রা বলেন, ‘এমনিতে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় দুর্বল। এরমধ্যে আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে না পাড়ায় বিদ্যালয় অটোমেটিক বন্ধ। এতে লেখাপড়ায় বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তাও কেউ বলতে পারছে না।’
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন শিবলী বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিরূপ পরিস্থিতির কারণে কয়েকটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে গেছে। অভিভাবকরা আতঙ্কে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে না। বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিক্ষার্থীরা না আসায় বিদ্যালয় প্রায় বন্ধের পথে। ইতিমধ্যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
রুমা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান বলেন, “রেমাক্রি প্রাংসার দু’টি বিদ্যালয় খুবই দুর্গম এলাকায়। পায়ে হেঁটে উঁচু-নিচু পাহাড় বেয়ে যেতে হয় দু’টি বিদ্যালয়ে। এরমধ্যে পাকনিয়ার পাড়া স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগে থেকেই কম ছিল। বর্তমানে সেখানে মাত্র ১৬-১৭ জনের মত শিক্ষার্থী রয়েছে।”
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, ‘দুর্গম পাহাড়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এমনিতেই কম। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আরও কমে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদ্যালয় খোলা হয়, আবার খারাপ পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায়।’ তবে সরকারিভাবে কোনো বিদ্যালয়ই বন্ধ নয় বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/এমও