Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জিপিএ ফাইভের কষ্ট তোমাদের আর করতে হবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ মার্চ ২০২৩ ২১:১৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: শিক্ষার্থীদের ‘জিপিএ ফাইভ’ পাবার দৌঁড়ঝাপ থেকে মুক্তি দিয়ে আনন্দদায়ক শিক্ষার জন্য ‘সিস্টেম পরিবর্তন’ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

শুক্রবার (৩ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গড়ে তোলা অবৈতনিক বিদ্যালয় ‘স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন’ উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একথা জানান। নগরীর টাইগারপাসের রেলওয়ে কলোনি মাঠে দুই দিনব্যাপী এ উৎসব চলছে।

বিজ্ঞাপন

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আগে একটা সময় ছিল বাবা মায়েরা এসে আমাকে বলতেন, আমার সন্তান জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। আমার ভালো লাগতো, বলতাম বাহ, জিপিএ-৫!

কিন্তু এখন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে শুনলে আর ভালো লাগে না, আনন্দ হয় না। কারণ এই জিপিএ-৫ পাবার জন্য শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত স্কুলে ক্লাস করতে হয়, এরপর কোচিং করতে হয়। রাতে কোচিং শেষে আবার বাসায় প্রাইভেট পড়তে হয়। প্রাইভেট শেষে আবার স্কুলের পড়া পড়তে হয়। গাইড বই মুখস্ত করতে হয়।’

‘আবার প্রশ্ন ফাঁস হলে, সেসব প্রশ্ন অভিভাবকরা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে এনে দেয় বাচ্চাদের। তখন শিশুদের সেগুলো মুখস্ত করতে হয়, পরীক্ষা দিতে হয়। আহারে, কতই না কষ্ট তাদের করতে হয় !’

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘বাচ্চারা এত কষ্ট করবে কেন ? তাদের এখন আনন্দ করার সময়, এত কষ্ট তারা কেন করবে? এজন্য আমরা সবাই মিলে সিস্টেমটাকে পরিবর্তন করেছি। ক্লাস সিক্স থেকে এখন আর পরীক্ষা-টরীক্ষা নেই। বাচ্চারা ক্লাসেই লেখাপড়া করবে, ক্লাসেই প্রজেক্ট করবে, পরীক্ষা দেবে, নিজেরা একজন আরেকজনের পরীক্ষায় নম্বর দেবে।’

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিজ্ঞান লেখক জাফর ইকবাল বলেন, ‘একটা সময় বাংলাদেশের অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে, টাকা পয়সা ছিল না। এখন অনেক উন্নত। সামনে এত উন্নত হবে যে, আমেরিকা থেকে লোকজন আসবে তোমাদের কাছে। তোমরা বড় ডাক্তার হবে। আমেরিকা থেকে ডাক্তার আসলে তোমরা চিকিৎসা করবে তো? রকেট বানাতে তোমাদের কাছে আসবে, লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডসহ অনেক প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত। আমি দেখেছি এইসব জায়গায় শুধু ধনী পরিবারের সন্তানরাই নয়, অনেক মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী সন্তানরাও অংশ নেয় এবং প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়। তাই আমাদের কাজ হলো সর্বক্ষেত্র থেকে আমাদের মেধাবীদের খুঁজে বের করা।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের সব ছেলেমেয়েকে লেখাপড়ার মাধ্যমে সামনে এগিয়ে আনতে চাই। স্বপ্নবাগিচা তাদের মতো আরো কিছু সংগঠনকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কাজটি করছে, যা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় আলোয় আনতে সাহায্য করবে। এসব মেধাবীদের দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আমরা গোল্ড মেডেল নিয়ে আসবো।’

‘আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমাদের চেয়ে জনবসতি আট থেকে দশগুণ বেশি। তারপরও আমরা নিয়মিতভাবে তাদের পেছনে ফেলি এসব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ওদের পেছনে ফেলে আনন্দ পেতে চাই না, আমরা চাই সারাদেশের সকল ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসতে পারি।’

বড় কাজ করতে টাকা নয় প্রয়োজন আন্তরিকতা ও ভালোবাসা উল্লেখ করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘পৃথিবীতে বড় বড় কাজ বেশি টাকা দিয়ে হয় না। যদি বেশি টাকা দিয়ে কাজ হতো, তাহলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বড় বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা হতো মধ্যপ্রাচ্যে। কারণ তাদের সবচেয়ে বেশি টাকা পয়সা। যেকোন কাজের জন্য প্রয়োজন আন্তরিকতা ও ভালোবাসা।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী।

এদিন সকাল থেকেই স্কুল উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়। সকালে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী পুনর্ব্যবহার করার কর্মশালার মধ্য দিয়ে উৎসব আয়োজনের সূচনা করা হয়। এরপর একে একে আয়োজিত হয় লোকনকশা কর্মশালা, র‌্যালি।

উৎসবে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের অগ্নিবীণা পাঠাগারের সদস্যরা। এছাড়া নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন বান্দরবানের পাওমাং শিশু সনদ। গান পরিবেশ করেন ‘প্রীতম ও বন্ধুরা’ এবং ব্যান্ড দল ‘মাদল’।

স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, উৎসবের দ্বিতীয়দিন শনিবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান উপস্থিত থাকবেন।

প্রধান শিক্ষক রঞ্জন সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ৩০ শিশুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নবাগিচা বিদ্যানিকেতন। প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর বর্তমানে রেলওয়ে কলোনি এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১৫০ জন শিশু এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। পাঠদানের পাশাপাশি সংগঠনের আয়োজনে আরো চালু হয়েছে স্বপ্নবাগিচা ছুটির দিনের পাঠশালা এবং স্বপ্নবাগিচা আরোগ্য নিকেতন।’

সারাবাংলা/আইসি/এনইউ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর