শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বদরুল আহসান
৪ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৮
ঢাকা: প্রয়াত সাংবাদিক শাহ আলমগীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ‘শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ শুরু করেছে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি)। এই অ্যাওয়ার্ড পেলেন লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান।
শনিবার (৪ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। দেশের বাইরে থাকায় সৈয়দ বদরুল আহসানের পক্ষে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই ও বোন। এ সময় ১ লাখ টাকার চেকও দেওয়া হয়। জুরিবোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এই অ্যাওয়ার্ড দেন। এর মধ্য দিয়ে প্রতি বছর দেশের একজন বরেণ্য ব্যক্তিকে শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজেসি’র নেতারা।
প্রয়াত সাংবাদিক শাহ আলমগীর ১৯৫৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার জাফরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবু ইউসুফ সরকার পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কাটে তার শৈশব ও কৈশর। লেখাপড়া শুরু হয়েছিল দুর্গাপুরের মহারাজা কুমুদচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে। এরপর ময়মনসিংহের গৌরীপুরের আর কে হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন শাহ আলমগীর। ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। কিশোর বাংলা পত্রিকা দিয়ে কাজের শুরু হলেও দৈনিক জনতা, দৈনিক আজাদী, বাংলার বানী, সংবাদ, চ্যানেল আই, একুশে টেলিভিশন, যমুনা টেলিভিশন, মাছরাঙা টেলিভিশন ও এশিয়ান টেলিভিশনে কাজ করেন তিনি।
নিয়মিত চাকরির মধ্যে নিজের বার্তাকক্ষ তো বটেই দেশের অন্যান্য সাংবাদিকদের সুরক্ষা আদায়ের কথা কখনো ভোলেননি শাহ আলমগীর। ১৯৮৭ সালে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় কাজ করতে গিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য হোন। নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব, ডিউইজের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যও। ২০১৩ সালের ৭ জুলাই থেকে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিউটের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন তিনি। এখানে থেকেই তিনি অবৈতনিকভাবে সারাদেশের সাংবাদিকদের জন্য সরকার গঠিত সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা নিয়ে গঠিত তহবিল থেকে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় তার হাত ধরেই সহায়তা দেওয়া শুরু হয়। এছাড়া বিজেসির প্রথম ন্যায়পাল মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। এবার তার কর্মকাণ্ড ও স্মৃতি ধরে রাখতে প্রথমবারের মতো তার নামে আওয়ার্ড চালু করল বিজেসি। যার শুরু হলো লেখক ও সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসানের মাধ্যমে।
সৈয়দ বদরুল আহসানের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের কোয়েটার সেন্ট ফ্রান্সিস গ্রামার স্কুল থেকে পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেন তিনি। সৈয়দ বদরুল আহসান একাধারে শিক্ষক ও সাংবাদিক। লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত। দ্য নিউ ন্যাশন, বাংলাদেশ অবজারভার, দ্য মর্নিং সান, নিউজ টুডে, নিউ এজ, সাপ্তাহিক ঢাকা কুরিয়ার, দ্য ডেইলি স্টার, ডেইলি অবজারভার, এশিয়ান এজ পত্রিকার বিভিন্ন পদে চাকরি করেছেন তিনি। পড়িয়েছেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে। সরকারি পদে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। রয়েছে ইতিহাসভিত্তিক প্রকাশনা। বর্তমানে তিনি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, রাজনীতি ও কূটনীতিক ভাষ্যকারে যুক্ত রয়েছেন। নিয়মিত লিখেছেন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, ‘এই সম্মান শুধু আমার একার জন্য নয়, গোটা সাংবাদিক সমাজের প্রাপ্য। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। নিজে উপস্থিত থেকে এই সম্মান নিতে পারলে ভাল লাগত। ১৯৮৩ সাল থেকে আমার সাংবাদিকতার শুরু। সাংবাদিকতার জীবনে সততা, নিষ্ঠা থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি। সব সময় আমি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সাংবাদিকদের যে সংকট চলছে তা সবাই মিলে যেন তা দূর করতে পারি।’
প্রয়াত শাহ আলমগীরের স্ত্রী ফৌজিয়া মায়া বলেন, ‘এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য বিজেসিকে ধন্যবাদ জানাই। যাকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হলো, তিনি শাহ আলমগীরেরও উপরের ব্যক্তি। আমি আশা করব- শুধু সাংবাদিক নয়, যারা সমাজের উন্নতি করে যাচ্ছেন, তারাই এই অ্যাওয়ার্ড পান। বিজেসির উদ্যোগ আমার খুব ভাল লেগেছে। এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা যে ভাবেন, শাহ আলমগীর আমাদের মাঝে থাকবেন- এটাই আমার জন্য অনেক পাওয়া।’
প্রয়াত শাহ আলমগীরের স্মৃতি চারণ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘সাংবাদিকতাকে একাডেমিকে রূপ দিয়েছিলেন শাহ আলমগীর। মানব কল্যাণে নিয়োজিত যে পেশা, সেটি সাংবাদিকতা। তার দিকপাল ছিলেন প্রয়াত শাহ আলমগীর।’
তিনি বলেন, শাহ আলমগীরের মতো মানুষ মারা গেলে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকদের ক্ষতি হয়। সাংবাদিকতায় এখন অনেক অভিযোগ আসে, সেটা এখন কীভাবে সমাধান করা যাবে? তিনি সাংবাদিকদের জন্য লড়েছেন। এই অ্যাওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে শাহ আলমগীর সাংবাদিকদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।’
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘পুরস্কারের সুর্নিদিষ্ট পরিচয় আমরা দেইনি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের বরেণ্যে ব্যক্তিদের এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। আর তা শাহ আলমগীর না হতে পারলেও তার কাছাকাছি রয়েছেন তাদেরই এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। শাহ আলমগীর ছিলেন আপোসহীন সাংবাদিক। তিনি একজন ভাল মানুষ ছিলেন। আমরা প্রথম অ্যাওয়ার্ডটি এমন একজন ব্যক্তিকে দিতে পেরেছি, যিনি শাহ আলমগীর না হলেও তার প্রতিচ্ছবি তার মধ্যে রয়েছে। আর এটা দিতে পেরে আমরাও কৃতার্থ।’
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শাহ আলমগীর আমাদের দীর্ঘ সময়ের বন্ধু ছিলেন। সাংবাদিকতার শিক্ষক ছিলেন। সাংবাদিকতার নীতি নৈতিকতা সমুন্নত রেখেছেন। কোথাও আপোস করেননি বিশেষ করে সংবাদপত্র মালিকদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে। তার সাহসী ভূমিকা ছিল অনুকরণীয়। এ পুরস্কার দেশের সাংবাদিকতাকে অনুপ্রাণিত করবে।’
বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, ‘শাহ আলমগীরের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের এ উদ্যোগ।’
সংগঠনের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সাংবাদিকরা এদেশের মানুষ ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই। অনেক বাধার মধ্য থেকে কাজ করে যান একজন সাংবাদিক। কিন্তু সে কাজের মূল্যায়ন আমরা পাই না। যারা দেশ ও সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সম্মানিত করতেই আমাদের এই আয়োজন। এ বিষয়ে জুড়িবোর্ড গঠন করা হবে, প্রতি বছর এই বোর্ড একজন সাংবাদিককে সম্মানিত করবে।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শাহ আলমগীর একজন পেশাদার সাংবাদিক, একজন শিক্ষক ও একজন সংগঠন ছিলেন। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্কিত হয়ে থেকেছি। কিন্তু শাহ আলমগীর সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন। আমাদের নেতা শাহ আলমগীর ভাইকে একুশে পদক দিয়ে সে সম্মান দিয়েছে সরকার, সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ স্বাধীনতা পদকের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
সারাবাংলা/জেআর/এনএস
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার শাহ আলমগীর শাহ আলমগীর জার্নালিজম এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড সৈয়দ বদরুল আহসান