Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপহরণের পর শিশুকে নদীতে ফেলার হুমকি, দম্পতি গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ মার্চ ২০২৩ ১৭:৩১

ঢাকা: মাত্র ৭ দিনের শিশুকে অপহরণের পর মুক্তিপণ চেয়ে বার্তা পাঠায় এক দম্পতি। মুক্তিপণের টাকা না দিলে শিশুটিকে নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। এ ঘটনায় জিডি হলে তদন্ত করে অপহরণকারী দম্পতিকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)।

শনিবার (৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। গ্রেফতাররা হলেন- রুবেল শেখ (৩৫) ও তার স্ত্রী তানিয়া আফরোজ (২৩)।

র‌্যাব জানায়, শিশুটির বয়স মাত্র ৭দিন। এখনো তার নাম রাখাই হয়নি। শিশুটির মা মিলি আক্তার পেশায় গৃহ পরিচারিকা। মিলি অন্তঃসত্ত্বা হলে স্বামী আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে পূর্ব পরিচিত রুবেল ও তার স্ত্রী তানিয়ার কাছে নবজাতক সন্তানকে রেখে ওষুধ আনতে বাইরে যান তিনি। আর এই সুযোগে নবজাতক শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান রুবেল ও তানিয়া। পরে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। না পেলে এ শিশুকে খুলনার রুপসা নদীতে ফেলে হত্যার হুমকি দেন তারা।

কোনো উপায় না পেয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী মিলি আক্তার। এরপর তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার (৩ মার্চ) রাতে যশোরের অভয়নগর এলাকা থেকে অপহরণকারী দম্পতিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। এ সময় অপহৃত নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র‌্যাব।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টার দিকে ধামরাই থানার ঢুলিভিটা এলাকায় মিলি আক্তার নামের এক নারীর সাত দিন বয়সী ছেলে সন্তানকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে করেন ভুক্তভোগী নারী। ডায়েরিতে উল্লেখ করেন, গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে পরিচিত রুবেল ও তানিয়া দম্পতির সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন রাতে তাদের কাছে সন্তানকে রেখে ওষুধ কিনতে গেলে বাসায় ফিরে সন্তানকে আর খুঁজে পাননি। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢুলিভিটা বাজার কমিটির কাছ থেকে রুবেলের বাসার ঠিকানা নিয়ে বাসায় গেলে বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রুবেল মোবাইল ফোন চালু করে নবজাতক শিশুকে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মোবাইল বন্ধ করে দেয়।

তিনি আরও বলেন, পরে গত ১ মার্চ রুবেল অন্য একটি নম্বর দিয়ে মিলি আক্তারকে ফোন করে জানায়, নবজাতক তার কাছে আছে। ফিরে পেতে হলে এক লাখ টাকা দিতে হবে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে নবজাতককে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী মিলি আক্তার তার নবজাতক শিশুকে ফিরে পেতে র‌্যাব-৪ এর সহায়তা চেয়ে অভিযোগ দাখিল করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য প্রযুক্তির সহাতায় র‌্যাব আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভুক্তভোগী মিলি আক্তার কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধামরাইয়ের ঢুলিভিটা এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। ঢুলিভিটা বাজারের পাশে থাকার কারণে একই এলাকার ভাড়াটিয়া রুবেল ও তার স্ত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একসময় তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রুবেল মিলি আক্তারকে ফুফু বলে ডাকত।

ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন মিলি। পরবর্তীতে গত ২৬ তারিখ সন্ধায় রুবেল ও তার স্ত্রী ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় আসে। মিলি অসুস্থ থাকায় নবজাতক শিশুকে রুবেল ও তার স্ত্রীর কাছে রেখে ওষুধ কিনতে যায়। পরবর্তীতে ২০ মিনিট পর ওষুধ কিনে বাসায় ফিরে আসে। বাসায় ফিরে ভুক্তভোগী মিলি আক্তার রুবেল ও তার স্ত্রীকে তার বাসায় দেখতে পায় না এবং নবজাতক ছেলেকেও খুঁজে পায় না।

গ্রেফতার রুবেল ও তার স্ত্রী র‌্যাবকে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ২ থেকে ৩ মাস ধরে ঢুলিভিটা বাজার এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছেন। রুবেল ধামরাইয়ের ঢুলিভিটার বাজার এলাকায় বিভিন্ন দোকান ও মানুষজনের নিকট থেকে টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ করতেন না। পাওনাদাররা ধার পরিশোধের জন্য চাপ দিতে থাকায় তিনি ঢুলিভিটা এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। পাশাপাশি ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কৌশলে ভুক্তভোগী মিলি আক্তারের নবজাতক শিশুকে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনাও করে। পরে সুযোগ বুঝে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হয়ে যায়।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, শিশুটি নিয়ে ধামরাই এলাকা থেকে প্রথমে বাস যোগে খুলনায় যান। সেখানে আত্মগোপনের জন্য তারা সুবিধামত ভাড়া বাসা খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে খুলনার অদূরে রূপসা নদীর অপর পাশে যশোরের আমতলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন। এই সময়ে বিভিন্নভাবে শিশুটির মা’কে মুক্তিপণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরই মধ্যে নবজাতক শিশুটি তার মায়ের অনুপস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মুক্তিপণ না পেলে শিশুটিকে গোপনে রূপসা নদীতে ফেলে দিয়ে আত্মগোপন করবে।

এর আগেও গ্রেফতার রুবেলের বিরুদ্ধে যশোরের অভয়নগর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা রয়েছে। তিনি জীবিকার তাগিদে গত সাত থেকে আট বছর ঢাকায় গামেন্টর্সকর্মীর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। রুবেল ইতিপূর্বে একাধিক বিবাহ করে। গ্রেফতার তানিয়া আফরোজ একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। গত তিন বছর পূর্বে পরিবারের অমতে রুবেলকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তার পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তানিয়াকে বিবাহ করে ধামরাই ঢুলিভিটা এলাকায় বসবাস করতেন তারা। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানায় র‌্যাব।

সারাবাংলা/ইউজে/এনএস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর