Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কনটেইনার ডিপোর ক্ষত না শুকাতেই অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ মার্চ ২০২৩ ২৩:১৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ঠিক নয় মাস আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। সেই বিস্ফোরণে হতাহতের দগদগে ক্ষত এখনও শুকায়নি। ওই ডিপো থেকে আনুমানিক পৌনে এক কিলোমিটার দূরে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ফের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল সীতাকুণ্ড।

গত বছরের ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নেভানো হয়। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এবং ডিপো পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু মানবদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ওই সময় আহত হন প্রায় দুই শতাধিক।

বিজ্ঞাপন

এর ঠিক নয় মাস পূর্ণ হওয়ার দিনই শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামে একটি কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে যায়। এতে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২২ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা অক্সিজেন প্ল্যান্ট। এখানে বিস্ফোরণের, আগুন লাগার এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ার অনেক উপাদান বিদ্যমান। তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি সবকিছু খতিয়ে দেখবে।’

ইউএনও শাহাদাত জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিস্ফোরণের পরপরই আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের আটটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ভেতর থেকে হতাহত সবাইকে বের করে ফেলা হয়েছে। আগুনে পুরো প্ল্যান্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

ভাটিয়ারি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। সংলগ্ন একটি পোশাক কারখানার জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন:

বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ওই কারখানা থেকে ‍উড়ে যাওয়া একটি লোহার টুকরার আঘাতে আনুমানিক আধা কিলোমিটার দূরে শামসুল আলম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার ভাগিনা পরিচয়ে জিসান নামে এক যুবক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মামা একটি লাকড়ির দোকানে বসেছিলেন। হঠাৎ লোহার টুকরা উড়ে এসে উনার মাথায় পড়ে। আহত অবস্থায় উনাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আমরা হাসপাতালে এসে দেখি উনি আর বেঁচে নেই।’

এদিকে, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্সে করে সীতাকুণ্ড থেকে আহতদের আনা হচ্ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাদের কারও পা থেতলে গেছে, কারও মাথায় আঘাত, কারও চোখে গুরুতর জখম, কারও শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন। একজনের লাশ দেখা গেল, তার দুই হাত নেই।

হাসপাতালে হতাহতদের স্বজনরা ভিড় করতে শুরু করেন সন্ধ্যার পর থেকেই। তাদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান হাসপাতালে গিয়ে হতাহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। বিকেলে বিস্ফোরণের সংবাদ পেয়েই ঘটনাস্থলে যান মেয়র। হতাহতদের উদ্ধার কার্যক্রম তদারক করেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

অক্সিজেন প্ল্যান্ট বিস্ফোরণ কনটেইনার ডিপো

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর