Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সীমা’র মালিক লাপাত্তা, বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ মার্চ ২০২৩ ১৩:২৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কারণ অভ্যন্তরীণভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় প্ল্যান্টে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ‘স্ট্যান্ডবাই’ রাখা হয়েছে।

তবে ধ্বংসস্তূপে হতাহত কিংবা নিখোঁজ আর কেউ না থাকার বিষয় নিশ্চিত হওয়ায় সেখানে উদ্ধার ও তল্লাশি কার্যক্রমের আর প্রয়োজন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গতকাল শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ছোট কুমিরা এলাকায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে যায়। এতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২২ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে জানান, হতাহতদের উদ্ধার এবং আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর গতকাল শনিবার রাত ১১টায় কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ৬টি ইউনিট ফিরে যায়। দু’টি ইউনিটকে সেখানে সার্বক্ষণিকভাবে রাখা হয়। এর মধ্যে একটি পানিবাহী এবং আরেকটি বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধান ও নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়েছে।

‘রাতে কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণার পর আর কেউ নিখোঁজ থাকার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আমরাও তল্লাশিতে নিশ্চিত হয়েছি যে, সেখানে আর কোনো লাশ কিংবা আহত কেউ থাকার সম্ভাবনা নেই। আবারও আগুন লাগতে পারে এমন সব উৎসও আমরা বন্ধ করেছি। এরপরও যেহেতু সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে, আবার কোনো দুর্ঘটনা যাতে না হয়, সেজন্য কারখানার নিরাপত্তায় দুটি ইউনিট রেখেছি।’

বিজ্ঞাপন

আব্দুল হালিম আরও জানান, উদ্ধার কাজ সমাপ্ত হয়ে যাওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মালিকপক্ষকে কারখানা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আর মালিকপক্ষের কাউকে না পেলে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ফায়ার সার্ভিসের টিম সেখান থেকে চলে আসবে।

জানা গেছে, সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডে উৎপাদিত অক্সি-এসিটিলিন গ্যাস লোহার পাত কাটা ও লোহা গলাতে ব্যবহার হয়। বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বিশেষ করে জাহাজভাঙা ও স্টিল রি-রোলিং মিলে এই গ্যাস ব্যবহার করা হয়। প্রয়াত শিপব্রেকিং ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শফির গড়ে তোলা কারখানাটি বর্তমানে তার তিন ছেলে মামুন উদ্দীন, আশরাফ উদ্দীন ও পারভেজ উদ্দীন পরিচালনা করেন।

তাদের মালিকানায় সীতাকুণ্ডের জাহানাবাদে এস ট্রেডিং নামে তাদের একটি জাহাজভাঙা এবং বানু বাজার এলাকায় সীমা স্টিল রি-রোলিং মিল (এসএসআরএম) নামে একটি কারখানা রয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর থেকে মালিকপক্ষের কারও হদিস মিলছে না। দুর্ঘটনাস্থল কিংবা হাসপাতালে কোথাও মালিকপক্ষের কোনো প্রতিনিধি নেই।

সীতাকণ্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ঘটনার পর থেকে ওনাদের কোনো হদিস আমরা পাচ্ছি না।’

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মালিকপক্ষের কোনো প্রতিনিধিকে আমরা ঘটনাস্থলেও পাইনি। হাসপাতালেও পাইনি।’

অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর অপরাধে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে ওসি জানিয়েছেন।

ভয়াবহ বিস্ফোরণে অক্সিজেন প্ল্যান্টটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আব্দুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখন মূলত আমাদের অভ্যন্তরীণ যে তদন্ত কার্যক্রম, বিস্ফোরণটা কিভাবে হল- সেটা অনুসন্ধান করছি। আমাদের টিম সেখানে আছে। তদন্তের পর অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন আমরা দেব। এরপর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতেও আমরা আছি। সেই কমিটি পৃথকভাবে তদন্ত করবে।’

প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ কী মনে হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। এটা ঠিক আছে। তবে বিস্ফোরণটা কি কারণে হয়েছে সেটা আমাদের টিম তদন্ত করছে। এখনও সেটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আব্দুল হালিম বলেন, ‘কমিটি করা হয়নি। আমাদের এক্সপার্টরা তদন্ত করছেন।’

রোববার সকালে বিস্ফোরক অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন। তিনিও বিস্ফোরণের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় বলে জানান।

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর