‘সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ নাশকতা কি না খতিয়ে দেখতে হবে’
৫ মার্চ ২০২৩ ২২:২০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড কারখানায় বিস্ফোরণ নাশকতা কি না খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রোববার (৫ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা উপমন্ত্রী একথা বলেন। অগ্নিদগ্ধ রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে চীনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক ও স্থান পরিদর্শনের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি।
চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিস্ফোরণে আহতদের দেখার নামে অহেতুক বিরক্ত না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আহতদের কাছে আমি যাচ্ছি না। এখন আমাদের সেখানে না যাওয়াই মঙ্গল। সেখানে গেলে বরং ইনফেকশন ছড়ানোর আশঙ্কা থাকতে পারে। এতে তাদের ক্ষতি হতে পারে। আমরা স্বেচ্ছাসেবী ব্যতীত রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ অন্যান্য যারা আছেন তাদের অনুরোধ করব, অযথা সেখানে ছবি তোলা কিংবা সহযোগিতার নামে ভিড় করবেন না। ভিড় করলে চিকিৎসকদের বেগ পেতে হয়।‘
বিস্ফোরণের নেপথ্যে কী ঘটেছিল সেটা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে কী ঘটেছিল, নাশকতামূলক কি না, কারও অমনযোগিতা কিংবা ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে হয়েছে কি না সেগুলো আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই মালিকপক্ষের দায় নিয়ে দুশ্চিন্তা বা চিন্তা থাকবে। তদন্তে সেটা দেখা যাবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যারা হতাহত আছেন, তাদের পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়া সরকারের মূল কর্তব্য।’
অক্সিজেন উৎপাদন কারখানাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘যে অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলো আছে, সেখান থেকে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রডের প্রতিষ্ঠানে অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়া হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডারের যে খাতটা আছে, সেখানে অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের সুরক্ষার নির্দেশনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আছে। তবে সে সুরক্ষার জায়গায় দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের যদি ঘাটতি থাকে, তাহলে পরিবারগুলো শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, দেশের অর্থনীতির ওপর বর্হিবিশ্বে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। এটা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে।’
‘সুতরাং সময় এসেছে চট্টগ্রামের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কি না সেটা যাচাই করে দেখা। গার্মেন্টস শিল্পে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকার থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তারপর কিন্তু কোনো গার্মেন্টসে আগুনের ঘটনা আমরা দেখিনি। সুতরাং, এই যে সিলিন্ডার কারখানা যেখানে বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে অক্সিজেন ছিল। অক্সিজেন একটা দাহ্য পদার্থ। সেখানে বিশেষভাবে অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা জরুরি।’
করোনাকালে অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আবুল খায়ের গ্রুপ থেকে শুরু করে সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু সাহেবের প্রতিষ্ঠান, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান মানুষের ঘরে ঘরে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। বিস্ফোরণের ঝুঁকি সেসময়ও ছিল। অবস্থা বিবেচনায় আমাদের প্রয়োজনে সেটা কাজে এসেছে।’
চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ বার্ন ইউনিট চালু হলে বিস্ফোরণ কিংবা অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুফল আসবে বলে জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর তিনি শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের কাছে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে দেন।
এর আগে, শনিবার নগরীর পূর্ব বাকলিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে ব্যক্তিগত অনুদান দেন। পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমেদ ইলিয়াস, সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ, বাকলিয়া থানার সদস্য মো. ইছাক, ওয়ার্ড সাংগঠনিক সম্পাদক মোনাফ হাজী, কাউন্সিলর শাহীন আক্তার রোজী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম