ঢাকা: বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৯ লাখ মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সম্ভাব্য ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাবের প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ- আইসিডিডিআর,বি এবং ইউনিসেফের যৌথ পদক্ষেপে এই জনগোষ্ঠীর মাঝে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
রোগের নজরদারি, চিকিৎসা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টিকাদানের মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে আইসিডিডিআর,বি, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে ২ হাজার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৫ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত ‘জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের ক্যাম্পে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে কলেরা নজরদারি’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম ও ফলাফল তুলে ধরতে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। এই সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সায়েন্স বিভাগের ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. এএসজি ফারুক ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র-ভিত্তিক নজরদারির ফলাফল উপস্থাপন করেন।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে (বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা) ও কৃশকায় (উচ্চতার তুলনায় কম ওজন) এবং ওজন স্বল্পতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা গেছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্লোরিনযুক্ত ট্যাপের পানির ব্যবহার, টয়লেট ব্যবহার, খাবার স্যালাইন এবং ভ্যাকসিন গ্রহণের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ডিরেক্টর ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, রোহিঙ্গা এলাকায় রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীতে কলেরা প্রাদুর্ভাব ও মহামারি প্রতিরোধে মুখে খাওয়ার কলেরা টিকাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যা বড় রকমের কোনো প্রাদুর্ভাবের অনুপস্থিতি থেকে প্রমাণিত হয়। এটি সম্ভব হয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, সিডিসি-ডিজিএইচএস, আইইডিসিআর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ সহ আমাদের অন্যান্য অংশীদারদের অসামান্য নেতৃত্ব এবং সমর্থনের মাধ্যমে।
এ সময় ইউনিসেফের হেলথ স্পেশালিস্ট ডা. মাইনুল হাসান আইসিডিডিআর,বির প্রশংসা করে বলেন, রোহিঙ্গা পরিবেশে তীব্র পানির মতো ডায়রিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণের এই সফল কার্যক্রমের অংশীদার হতে পেরে ইউনিসেফ গর্বিত। আমাদের কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাওয়া দরকার, এবং আমরা বিশ্বাস করি আমরা একসাথে এসকল রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।
সেমিনারে আইসিডিডিআর,বি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাত দফা টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্যাম্পে মানুষকে শতভাগ টিকাদান করা হয়েছে। প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা জনগণ ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৯ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের কাছাকাছি বসবাসকারী ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৯৭ এবং স্থানীয় জনগণ ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৮ ডোজ মুখে খাওয়ার কলেরা ভ্যাকসিন পেয়েছে।
সংস্থাটি জানিয়েছে, টেকনাফে পাঁচটি ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র (ডিটিসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে। লেদা ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্রের কার্যক্রম এখনো চলছে এবং এখানে প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার ৫০০ রোগীর চিকিৎসা হয়। এছাড়াও কেন্দ্রটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে চলমান যৌথ মূল্যায়ন দলেও অংশ নিচ্ছে।
সেমিনারে প্রকল্পের কো-প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর এবং আইসিডিডিআর,বি-র হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং ২০১৭ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার সঙ্গে দ্রুত আইসিডিডিআর,বি ও ইউনিসেফের যৌথ পরিচালনায় একটি মাঠ পর্যায়ের মূল্যায়ন করেন।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা এলাকায় সাফল্য পেলেও, এটা স্পষ্ট যে শরণার্থী শিবিরে ভবিষ্যতে প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য টেকসই প্রচেষ্টা প্রয়োজন। টিকা দেওয়ার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী এবং টেকসই পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি হস্তক্ষেপ, একটি বিস্তৃত নজরদারি ব্যবস্থা এবং সঠিক কেস ব্যবস্থাপনা এরকম মানবিক সংকটপূর্ণ স্থানে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয়।