Thursday 06 Feb 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাভ পাওয়ায় স্ট্রবেরি চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ মার্চ ২০২৩ ১০:৩৩ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:৫৫

ঢাকা: দেশে ধীরে ধীরে স্ট্রবেরি চাষের আওতা বাড়ছে। কখনও বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ আবার কখনও আবাদের পরিমাণ কমে গেলেও মোটাদাগে স্ট্রবেরি চাষে কৃষক আগ্রহ হারাচ্ছেন না। বর্তমানে বাজারে কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে স্ট্রবেরি। মাঠ পর্যায়ের কৃষকও ভালো দাম পাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে ২৮০ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়। বছরটিতে উৎপাদন হয় ১ হাজার ৫৯৪ টন স্ট্রবেরি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৩ হেক্টর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়। ওই বছর উৎপাদন ৪৫০ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাষ হয় ৫০ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয় ২২১ টন। ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে চাষ হয় যথাক্রমে ৪৩, ৬৪ ও ৪০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় যথাক্রমে ২০১, ২৮৬ ও ১৯৬ টন। ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে চাষ হয় যথাক্রমে ৮৪, ১০১ ও ১২০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন যথাক্রমে ৩৮৯, ৭৮৯ ও ৯০০ টন।

বিজ্ঞাপন

অর্থাৎ, দেশে স্ট্রবেরি চাষ কখনও কমেছে কখনও বেড়েছে। তবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যে ব্যাপক মাত্রায় চাষ হয়েছিল তা আর কোনো বছরই হয়নি। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে ৯০০টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস সারাবাংলাকে বলেন, স্ট্রবেরি চাষ এখনও জনপ্রিয়তার পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে চাষ বাড়ছে। এবার স্ট্রবেরির সাইজ, মান ও ফলন ভালো। আমরা এটি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখনও কয়েকটি জেলার মধ্যেই স্ট্রবেরি চাষ সীমাবদ্ধ রয়েছে। উন্নতমানের হোটেলগুলোতে স্ট্রবেরির চাহিদা প্রচুর। ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দামে স্ট্রবেরি অনায়াসে বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সীমিত আকারে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্ট্রবেরি চাষ হচ্ছে। স্ট্রবেরি চাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি যেমন বলা যাবে না, আবার কৃষক আগ্রহী নয় এমনও বলা যাবে না। বেশি দাম পাওয়ায় একজনের দেখাদেখি অন্য কৃষক আগ্রহী হয়ে উঠছে। সবমিলিয়ে দেশে স্ট্রবেরি চাষের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. মেহেদী মাসুদ সারাবাংলাকে বলেন, স্ট্রবেরি জয়পুরহাট ও রাজশাহী এলাকায় বেশি চাষ হয়। মাঠ থেকে স্ট্রবেরি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তা বাজারে নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু দেশে সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে কৃষকের উৎপাদিত স্ট্রবেরি নষ্ট হয়ে যায়। আবার দেশে স্ট্রবেরি প্রক্রিয়াজাতও করা যায় না।

তিনি বলেন, স্ট্রবেরিকে প্রধান ফসল হিসেবে চালানো ঠিক হবে না। ইন্টার ক্রপ বা আন্তঃফসল হিসেবে চালাতে হবে। আমরা স্ট্রবেরির বেশি উৎপাদন উৎসাহিত করছি না আবার এর উৎপাদন নিরুৎসাহিতও করছি না। প্রধান ফসলের পাশাপাশি এটিকে আন্তঃফসল হিসাবে চাষ করা যেতে পারে। ফলে প্রধান ফসলের উৎপাদন খরচটি এখান থেকে উঠে আসবে।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার কৃষক মো. শাহীন উদ্দিন। ১২ কাঠা জমিতে ২০০৮ সালে স্বল্প পরিসরে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেন। এরপর থেকে নিয়মিত চাষ করে এলেও কখনও কিছু লাভ হয়েছে, আবার লোকসান দিতে হয়েছে তাকে। তিনি ২০১৪ সালে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে উৎপাদিত স্ট্রবেরির দাম না পেয়ে কারওয়ান বাজারের রাস্তায় ফেলে দিয়ে বাড়ি ফেরেন খালি হাতে। ক্ষোভে দুই এক বছর স্ট্রবেরি চাষে বিরত ছিলেন। তবে আবারও উৎপাদনে ফিরেছেন তিনি। বর্তমানে আর সেই অবস্থা নেই। স্ট্রবেরি চাষিদের কষ্ট দূর হয়েছে।

শাহীন উদ্দিন এখন ৭ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে বেশ ভালো লাভ করছেন। এক যুগের কষ্ট ভুলতে বসেছেন তিনি। তার মতে, সারাদেশের স্ট্রবেরি চাষিরাই এখন বেশ খুশি, কারণ বাজারে চাড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে স্ট্রবেরি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কৃষক রকিবুল ইসলাম রকি। দুই বছর চাষের প্রক্রিয়া শিখে বেকারত্ব কাটানোর জন্য পেশা হিসেব ২০১৫ সালে বেছে নিয়েছিলেন স্ট্রবেরি চাষ। কিন্তু শুরু থেকেই অভিজ্ঞতা ছিল অনেকটা তিক্ত। স্ট্রবেরি একটি উচ্চ দামের ফসল হলেও সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চাষ করে মাত্র ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়েছিল তাকে।

রকিবুল ইসলাম রকি বলেন, ‘৫ থেকে ৬ লাখ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রথমবার দেড় লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছিল। পরের কয়েক বছর অবশ্য খুব বেশি লাভ না হলেও লোকসান হয়নি। এখন তো বাজারে দিলেই বিক্রি হয়ে যায়, দামও ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। এই অবস্থাটা ২০১৭ সাল পর্যন্তও ছিল না।’

স্ট্রবেরি ও ড্রাগন ফল একসঙ্গে চাষ করছেন কৃষক রুহুল আমীন। তিনি জানান, এ বছর ড্রাগনের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে স্ট্রবেরি করেছেন। মান ভালো হওয়ায় ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করেছেন তিনি।

ঢাকার বাজারে বর্তমানে এক কেজি স্ট্রবেরি ৫৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদনকারী কৃষকও মান অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে স্ট্রবেরি বিক্রি করছেন। সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে রাজশাহীতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম।

সারাবাংলা/ইএইচটি/আইই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর