Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিদ্দিকবাজারে গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ, ধারণা ফায়ার সার্ভিসের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ মার্চ ২০২৩ ১১:৩৮

ঢাকা: রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইন স্যানিটারি মার্কেটে (পৌর ভবন) কোনো বিস্ফোরক দ্রব্যের আলামত পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্যাস থেকেই এই বিকট বিস্ফোরণ বলে প্রথমিকভাবে ধারণা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তাদের।

ফায়ার সার্ভিসের এক উদ্ধর্তন কর্মকর্তা বলেন, ওই ভবনের বেজমেন্ট থেকেই এই বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাদ খসে পড়েছে। এছাড়া নিচের পিলারে ফাটল ধরেছে। ফলে উদ্ধার অভিযানও এখন সর্তকতার সঙ্গে করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাফে কুইন (পৌর ভবন) চায়না পয়েন্টে (ব্র্যাক ব্যাংক) দেওয়াল ঘেষে উত্তর পাশের বেজমেন্ট থেকে এই বিস্ফোরণ হয়। এতে ওই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ছাদও খসে পড়েছে। এছাড়া তৃতীয় তলা থেকে সাত তলা পর্যন্ত আবাসিক বাসা রয়েছে। চায়না পয়েন্ট ভবনের তিন ও চার তলায় গ্লাস দিয়ে ডেকরেশন করা ব্র্যাক ব্যাংকের সব গ্লাস খসে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এই ভবনের যেখানে বিস্ফোরণটি ঘটেছে, সেখানে ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্টের রান্নাঘর ছিল। তবে সেটি আরও ৭-৮ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ওই ভবনের মালিক রেজাউল রহমান মারা যাওয়ার পরে তার ছেলেরা আর চালায়নি। তিন ছেলের মধ্যে দুইজন পরিবার নিয়ে ওই বাসাতেই থাকতেন। আর এক ছেলে থাকেন বিদেশে।

ভবনটি দু’টি শেডে নির্মিত বলেও দেখা গেছে। প্রথমে এক থেকে তিন তলা নির্মাণ করা হয়। পরে তার ওপরে আরও চার তলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসা মালিকের এক আত্মীয় এই প্রতিবেদককে বলেন, এই ভবন নির্মাণের কোনো বৈধ্য কাগজপত্র নেই। এছাড়া এই ভবনটি কোনো ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে নির্মাণ করা হয়নি। সাধারণ মিস্ত্রি দিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আপনি দেখতেই পারছেন, ভবনের তিন তলা আর তার ওপরে অংশ আলাদা। ভবনটির দুই পাশে লাগোয়া ভবন না থাকলে, আগেই ধসে পড়ার ভয় ছিল।

স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ভবনটি ৩০ থেকে ৩৫ বছরের পুরানো। এখানে প্রথমে নিচে রান্নাঘর আর দুই ও তিন তলায় ক্যাফে কুইন রেস্টুরেন্ট বানিয়ে চালাতেন বাসার মালিক রেজাউল রহমান। আর রান্নাঘরের পাশের অংশ স্যানিটারি দোকান ভাড়া দিয়ে চলতো। পরে তার অনুপস্থিতিতে ছেলেরা এটাকে সব স্যানিটারি মার্কেট করে ভাড়া দিয়েছে। শুনছিলাম তারা এটা ভেঙে ফেলে নতুন করে আবার ভবন করেত চাইছিল, তার আগেই এই ঘটনা ঘটে গেছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় চারটি স্যানিটারির দোকান ছিল। আর তিন ও চার তলায় তার দুই ছেলের পরিবার ও তাদের মা বসবাস করে আসছিলেন। এছাড়া পাঁচ ও ছয় তলা আবাসিক বসবাসের জন্য ভাড়া দেওয়া ছিল।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আসা কয়েকজন ব্যক্তি জানান, এখানে আসার পরেও আমরা গ্যাসের গন্ধ পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস থেকেই এই বিস্ফোরণ। এই কথার সত্যতাও মেলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা কথাতেও। তিনি বলেন, আমরা প্রথমে এসে গ্যাসের গন্ধ পেয়েছি। আগে গ্যাসের লাইন বন্ধ করে কাজ শুরু করি।

তিনি বলেন, এটা যেহেতু আবাসিক ভবন সেহেতু গ্যাসলাইন থাকাই স্বাভাবিক। আর শুনেছি বিস্ফোরণের পাশে আগে রান্নাঘর ছিল। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। সেনাবাহিনীর বোম ডিসপোজাল ইউনিট এসেছে, তারা কাজ করেছেন। এখন পর্যন্ত এমন কোনো বিস্ফোরক আলামত পাওয়া যায়নি, যা থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, এখনো লাশ থাকতে পারে। কারণ ভবনের যে অবস্থা তাতে অভিযান চালানো ঝুকিপূর্ণ। ভবনের বেজমেন্টে ফাটল ধরেছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এখানে উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য ভেহিকেল নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু ভবনের অবস্থা দেখে ভেহিকেল দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আনা ঝুঁকিপূর্ণ।

সিদ্দিকবাজারের রাস্তার ধারেই গায়ে গা লাগিয়ে চারটি ভবন দাঁড়িয়ে আছে। এরমধ্যে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে প্রথমে ফাতেমা মার্কেট, ক্যাফে কুইন (পৌর ভবন), চায়না পয়েন্ট আর কাদের ম্যানশন। দেখা যায় ফাতেমা মার্কেট, ক্যাফে কুইন যেন একই দেওয়ালে উঠে দাড়িয়েছে। আর পাশেই চায়না পয়েন্ট আর কাদের ম্যানশন।

পাশের ভবনের কোনো বড় ধরেনর ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে বিস্ফোরণের দেওয়াল লাগোয়া চায়না পয়েন্টের তিন ও চার তলায় ব্র্যাক ব্যাংকের গ্লাস ভেঙে আলদা হয়ে গেছে। ওই গ্লাসের টুকরা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট, র‌্যাবের গোয়েন্দারা, সেনা বাহিনীর বিশেষ বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল ৪টা ৫০মিনিটের দিকে ১০৮/১ ক্যাফে কুইন স্যানিটারি সাত তলা মার্কেটের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়েত পারে। ১২০ জনকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে ঢামেক হাসপাতালে।

গত রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। পরদিন বুধবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ফের উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।

আরও পড়ুন

সারাবাংলা/ইউজে/আইই

গুলিস্তান বিস্ফোরণ টপ নিউজ সিদ্দিকবাজার বিস্ফোরণ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর