ফেব্রুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৮৭
৮ মার্চ ২০২৩ ২২:০১
ঢাকা: ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৭ জন নিহত এবং ৭১২ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে নারী ৫৪ জন ও শিশু ৬৮।
৪৩৯টি দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে মোটরসাইকেলে। ফেব্রুয়ারিতে ১৮৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, যা মোট দুর্ঘটনার ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর এতে ১৯৬ জন নিহত হয়েছেন। যা মোট নিহতের ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৮ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
বুধবার (৮ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তারা নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্টনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
এতে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে আর সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে। ঢাকায় ১১৩টি দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত হয়েছেন। আর ময়মনসিংহে ২২টি দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ৩৩টি দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আর একক জেলা হিসেবে সবচেয়ে কম মেহেরপুরে ৩টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আর ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে ২৩টি দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৬ জন (৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ), বাস যাত্রী ২১ জন (৪ দশমিক ৩১ শতাংশ), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি আরোহী ২২ জন (৪ দশমিক ৫১ শতাংশ), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ১৬ জন (৩ দশমিক ২৮ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-টেম্পু) ১০১ জন (২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম-পাওয়ারটিলার-ইট ভাঙ্গার মেশিন গাড়ি) ১৮ জন (৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল আরোহী পাঁচজন (১ দশমিক ০২ শতাংশ) নিহত হয়েছে।দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৬৮টি (৩৮ দশমিক ২৬ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৭৭টি (৪০ দশমিক ৩১ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি (১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ২৯টি (৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) শহরাঞ্চলের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (০ দশমিক ৯১ শতাংশ) দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
৪৩৯টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৬৮টি (১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২০১টি (৪৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১২টি (২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৪৭টি (১০ দশমিক ৭০ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১টি (২ দশমিক ৫০ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনসমূহ
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-তেলবাহী ট্যাঙ্কার ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৩ দশমিক ১৬ শতাংস, মোটরসাইকেল ২৬ দশমিক ২০ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-টেম্পু) ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-আলগানন-টমটম-মাহিন্দ্র-পাওয়ারটিলার) ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং বাইসাইকেল ০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনের সংখ্যা
ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৭২৯টি যানবাহন দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। এদের মধ্যে ট্রাক ১৩২টি, বাস ৯৬টি, কাভার্ডভ্যান ২৪টি, পিকআপ ১৮টি, ট্রলি ২০টি, লরি ৩টি, ট্রাক্টর ১৬টি, ড্রাম ট্রাক ৯টি, তেলের ট্যাঙ্কার ১টি, মাইক্রোবাস ১৪টি, প্রাইভেটকার ২৬টি, অ্যাম্বুলেন্স পাঁচটি, মোটরসাইকেল ১৯১টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-টেম্পু) ১১৮ টি, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-চান্দের গাড়ি-টমটম-মাহিন্দ্র-আলগানন-পটাংগাড়ি-পাওয়ারটিলার) ৫২ টি এবং বাইসাইকেল চারটি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনার কয়েকটি প্রধান কারণ খুঁজে পেয়েছে। সেগুলো হলো- ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, ২. বেপরোয়া গতি, ৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, ৪. পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট না থাকা, ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, ৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও ১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম