Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মা-বাবা-বোনকে খুন করেছিল মুন’

আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ মার্চ ২০২৩ ১১:৪৫

ঢাকা: ২ বছর আগে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বাবা, মা ও বোনকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন মেহেজাবিন ইসলাম মুন। নিজের সংসার টেকাতে, স্বামীকে কাছে পেতে বাবা-মা ও বোনকে খুন করার অভিযোগ ওঠে মুনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি মামলার তদন্ত করে মুনকে অভিযুক্ত করেই চার্জশিট দাখিল করেছেন কদমতলী থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ফেরদৌস আলম সরকার।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়- স্বামীকে একান্তভাবে কাছে পেতে মুন তার মা-বাবা ও বোনকে খুন করেন।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালের ১৮ জুন রাতে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় চা-কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে বাবা মাসুদ রানা, মা মৌসুমি ইসলাম এবং বোন জান্নাতুল ইসলাম মোহিনীকে খুন করেন মেহজাবিন ইসলাম মুন। ওই ঘটনায় মাসুদ রানার বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন মেহজাবিন ও শফিকুলকে আসামি করে কদমতলী থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। বর্তমানে মেহেজাবিন কারাগারে রয়েছেন। তার স্বামী শফিকুল এই মামলায় জামিনে থাকলেও অন্য মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

পুলিশের চার্জশিটের বিষয়ে মামলার বিষয়ে বাদী সাখাওয়াত হোসেন জানান, একটি মেয়ের পক্ষে ৩ জনকে খুন করা সম্ভব না। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি ঘটনার সঙ্গে শফিকুল জড়িত। আগে থেকেই সম্পত্তি গ্রাস করার একটা মানসিকতা ছিলো শফিকুলের। শফিকুল মুনকে প্ররোচিত করেছে খুন করার জন্য। আর ঘটনার সময় শফিকুল ঘরেই ছিল। পুলিশ মামলায় মুনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছি আর শফিকুলের অব্যাহতি দিয়েছে। এই তদন্ত রিপোর্ট আমরা মানি না। আমরা চাই, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হোক, প্রকৃত আসামির কঠিন সাজা হোক।’

এদিকে পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে গত বছরের ৬ অক্টোবর নারাজি দাখিল করেন বাদী সাখাওয়াত হোসেন। নারাজিতে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, মামলায় তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি। মুন এত বড় ঘটনা একা ঘটাতে পারে না। আরও কারও যোগসাজস রয়েছে। নারাজি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরফাতুল রাকিবের আদালত মামলাটি সিআইডিকে পুনরায় তদন্তের আদেশ দেন। বর্তমানে মামলা তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মামলার চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শফিকুলের সঙ্গে মেহেজাবিনের বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ভিকটিম মাসুদ রানা ২৬ বছর সৌদি প্রবাসী ছিলেন। তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম ও কন্যা জান্নাতুল ইসলাম মোহনী কদতমলী থানাধীন মুরাদপুরে একটি বাসায় ভাড়া থাকতো। মাসুদ রানা মাঝেমধ্যে এসে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

মেহেজাবিন তার স্বামী-সন্তান নিয়ে কদমতলীর পূর্ব জুরাইনের একটি বাসায় ভাড়া থাকতো। মাসুদ রানা সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন সময় মূল্যবান সম্পদ তার স্ত্রী মৌসুমীর কাছে পাঠাকেন। মোহনীকে লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো পাত্রের কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য মৌসুমী সম্পদ সঞ্চয় করতে থাকেন। বাবার পাঠানো কোনো জিনিস মেহেজাবিনকে তার মা দিতেন না। এর ফলে তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়।

অন্যদিকে শফিকুল তার স্ত্রীর ছোটবোন মোহনীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই বিষয়ে মেহেজাবিন তার বোনকে বারবার সতর্ক করলেও তার কথা শোনেননি। মেহেজাবিন বিষয়টি তার বাবা-মাকেও জানায়। কিন্তু তারা কোনো সুরাহা করে না। পূর্বের ক্ষোভ থেকে হত্যার ঘটনার তিন মাস আগে মেহজাবিন তরমুজের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে তার বাবা-মা ও বোনকে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মেহজাবিন প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে পুনরায় তাদের হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, একই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১০ জুন রাত ৮টার সময় মুরাদপুরের একটি ফার্মেসি থেকে ৯টি, ১৫ জুন আরও দু’টি এবং ১৬ জুন ১০টি ঘুমের ওষুধ কেনে। আর ১৭ জুন শনিরআখড়া ফুটপাতের দোকান থেকে একটি চাপাতি ও কাঁচি কেনেন। ১৮ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘুমের ট্যাবলেট, চাপাতি, কাঁচি, স্বামী-সন্তানসহ বাবার বাসায় যায়। পূর্বের ভুল-ত্রুটির বিষয়ে ক্ষমা চায়। তারা তাকে ক্ষমা করে বাসায় থাকতে বলেন।

খাওয়া দাওয়া শেষে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ১১টার দিকে চা কফির সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে খেতে দেয় মেহেজাবিন। তারা সবাই অচেতন হয়ে গেলে বাসার মেইন দরজা বন্ধ করে বারান্দায় কাপড় শুকানোর রশি কেটে মায়ের পিঠ মোড়া দিয়ে হাত-পা বাঁধে। ওড়না দিয়ে বাবা ও বোনকে পিঠ মোড়া দিয়ে হাত, পা বাঁধে। ওড়না পেঁচিয়ে তিনজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মোহনী টের পেয়ে চিৎকার দেওয়ার চেষ্টা করলে মেহেজাবিন দু’টি পলিথিন তার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে। যা মেহেজাবিন আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও বলেছে।

জানা যায়, কদমতলীর মুরাদপুর হাইস্কুলের পাশে লালমিয়া সরকার রোডের ২৮ নম্বর ছয় তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন মাসুদ রানা। তার সঙ্গে স্ত্রী মৌসুমী ও ছোট মেয়ে জান্নাতুল থাকতেন। দীর্ঘ ২৬ বছরের প্রবাস জীবন শেষে ২০২১ সালে দেশে ফেরেন মাসুদ রানা। তাদের বড় মেয়ে মুনের প্রথম বিয়ে হয় ২০১৪ সালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার স্বামী আমিন খুন হন।

আমিন খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন মুন, তার মা মৌসুমী, ছোট বোন জান্নাতুল ও খালা শিউলি আক্তার। কিছুদিন পরই সবাই জামিনে মুক্তি পেলেও মুনের জামিন হয়নি। দীর্ঘ ৫ বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্ত হয় মুন। এর কিছুদিনের মধ্যেই শফিকুল ইসলামের (৩০) সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে কদমতলীর বাগানবাড়িতে থাকতো সে।

সারাবাংলা/এআই/এমও

ঘুমের ওষুধ মা-বাবা-বোনকে খুন মেহেজাবিন ইসলাম মুন রাজধানীর কদমতলী

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর