Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার ৩ বছর: প্রস্তুতি ঘাটতি থাকলেও সফল স্বাস্থ্য খাত (পর্ব-১)

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ মার্চ ২০২৩ ২২:৪০

ঢাকা: ২০২০ সালের ৮ মার্চ যখন সংক্রমণ শনাক্ত হয় তখন থেকেই মূলত প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয় সামনে আসতে থাকে। তবে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ সংক্রমণ শনাক্তের তিন বছর পার হওয়ার সময় করোনা মোকাবিলায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অর্থায়নে করা একটি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেমিনারে জানানো হয়, কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য যে ধরনের সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে তা ছিল না। একইভাবে প্রথম বছর পার করেও দেখা যায় নমুনা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও চিকিৎসাসেবার প্রস্তুতিতেও কমতি ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পূর্ণ নতুন একটা অতিমারি ভাইরাস মোকাবিলায় যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার ছিল অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সেটা করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। একইসঙ্গে ভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়েও কোনো সম্পূরক ধারণা ছিল না। পুরো বিশ্বজুড়েই দেখা যায় একই অবস্থা। দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবেই নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি সামনে আসে। একইসঙ্গে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা নিয়েও অপ্রতুলতার বিষয়টি উঠে আসে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতির পাশাপাশি আরও অনেক দুর্বলতার বিষয় সামনে আসে। তবে সফল ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি ধীরে ধীরে সব ঘাটতি কাটিয়ে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন সফল। অতিমারি শেষ না হলেও বর্তমানে স্থিতিশীল দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি। তবে করোনা মোকাবিলা যেসব অর্জন ও সফলতা লাভ করেছে স্বাস্থ্যসেবা খাত সেগুলোকে ধরে রাখতে হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা।

সবচেয়ে বড় সফলতা ভ্যাকসিনেশনে

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় সবচাইতে বেশি প্রভাব ফেলেছে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম। শুরুর দিকে কিছুটা অব্যবস্থাপনা দেখা দিলেও খুব দ্রুতই সেটি কাটিয়ে ওঠে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমের গতি বাড়লে সংক্রমণের হার কমে আসতে থাকে।

২০২০ সালের ৫ নভেম্বর সচিবালয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও সুইডেনের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অ্যাস্ট্রেজেনেকার তৈরি তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পেতে একটি সমঝোতা স্মারক (এমইউ) সই করে বাংলাদেশ সরকার। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রেজেনেকার প্যাটেন্টে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ ব্র্যান্ডের এই ভ্যাকসিন আনতে সিরামের সঙ্গে সরকার ও দেশীয় ওষুধ উৎপাদনকারী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী জানানো হয়, মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে দেশে আসবে তিন কোটি ভ্যাকসিন।

 

ফাইল ছবি

সিরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ কিনে আগাম অর্থ পরিশোধ করলেও ভারতের উপহার দেওয়া ‘কোভিশিল্ড’ ব্র্যান্ডের ২০ লাখ চার হাজার ডোজ ভ্যাকসিন প্রথম দেশে আসে। পরে ২৫ জানুয়ারি সরকারের কেনা ভ্যাকসিনের মধ্যে প্রথম ধাপে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আনা হয়। পরে আরও ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনও দেশে এসেছে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু যেভাবে

২৭ জানুয়ারি দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তিনি। এর মাধ্যমে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়।

পরে ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগের শুরুর দিকে কিছুটা ভাটা দেখা গেলেও ধীরে ধীরে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়তে থাক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে গণটিকার পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভ্যাকসিন প্রয়োগের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুদেরও ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলমান আছে।

সর্বমোট ভ্যাকসিন প্রয়োগ সংখ্যা

২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ১১ কোটি ৪০ লাখ ৯৬ হাজার ৬১২ জন। এর মাঝে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার ৭২১ জন।

যারা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তাদের মাঝে ছয় কোটি ৭৪ লাখ ১১ হাজার ৯৬৬ ডোজ তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮২ জন ভ্যাকসিনের চতুর্থ বা দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ নিয়েছেন।

দেশে ২-১৭ বছর বয়সীদের মাঝে প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৬ জন। এর মাঝে এক কোটি ৬২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪১ জন দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে। এছাড়াও, দেশে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সীদের মাঝে এক কোটি ৯১ লাখ ১১ হাজার ৪৮ জন ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছে। এর মাঝে এক কোটি ১১ লাখ ৬৪ হাজার ১৬২জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।

দেশে ১ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ দেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, ‘নতুন ভ্যাকসিন যখনই আসবে তখনই প্রয়োগ শুরু হবে। আপাতত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া চলমান থাকবে।’

নমুনা পরীক্ষায় বেড়েছে ল্যাবের সংখ্যা

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের পরে নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র আইইডিসিআরে নমুনা পরীক্ষা করা হতো। শুধুমাত্র নমুনা সংগ্রহ করার জন্য যেসব বুথ স্থাপন করা হয় তাতে ছিল দীর্ঘ লাইন। লকডাউন বা বিধিনিষেধ চলার কারণে ঢাকার বাইরের অনেক এলাকার সম্ভাব্য রোগীদের বিপত্তি পোহাতে হয় নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য।

তবে প্রাথমিকভাবে আইইডিসিআরের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হলেও বর্তমানে দেশে ৫৭টি আর-টি পিসিআর ল্যাব আছে সরকারিভাবে। শুধুমাত্র সরকারিভাবেই নয় দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থাপন করা হয়েছে আর-টি পিসিআর ল্যাব।

এর মাঝে বিনামূল্যে দেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য বেসরকারিভাবে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীর প্রতীক। ২৯ এপ্রিল ল্যাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশের জন্য এগিয়ে এসে বেসরকারিভাবে ল্যাব স্থাপনের জন্য এদিন গাজী গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেই করোনা পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে সারাদেশে ১০৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আর-টি পিসিআর ল্যাব আছে।

আরটি-পিসিআর বাদেও দেশে সরকারিভাবে ৫৪টি জিন এক্সপার্ট মেশিনে নমুনা পরীক্ষা করা হয় বর্তমানে। এর বাইরে বেসরকারিভাবে জিন এক্সপার্ট তিনটি মেশিনে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে দেশে দ্রুততম সময়ে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্তের জন্য শুরু করা হয় র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা।

বর্তমানে ৫৪৫টি সরকারি ও ১২১টি বেসরকারি ল্যাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের জন্য র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পদ্ধতি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে প্রাথমিকভাবে যেখানে ছিল শুধুমাত্র একটি ল্যাব সেখানে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ৮৮৫টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে।

দেশে ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত এক কোটি ৫৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মাঝে সরকারিভাবে এক কোটি এক লাখ ৪৬ হাজার ২৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ৫১ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করেছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় সমন্বিত কমিটি

দেশে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই এটি কিছুটা সংশোধন করে বাংলাদেশ প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান (বিপিআরপি) তৈরি করা হয়। বর্তমানে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিপিআরপি অনুযায়ী কোভিড-১৯ মোকাবিলার পাশাপাশি নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা ও কাজের সমন্বয়ের জন্য গঠন করা হয় ছয়টি কমিটি।

সেগুলো হলো-
• কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সার্বিক সমন্বয় (কোর) কমিটি
• কোভিড-১৯ রোগ নির্ণয় ও ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটি
• কোভিড-১৯ রোগতাত্ত্বিক ও জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমবিষয়ক কমিটি
• কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কমিটি
• কোভিড-১৯ গবেষণা কার্যক্রম সমন্বয়বিষয়ক কমিটি
• অত্যাবশ্যকীয় সেবা ব্যবস্থাপনা কমিটি

চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন।। ছবি: শ্যামল নন্দী

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের প্রভাবে পড়েছে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতিপ্রকৃতিতে। ফলে সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে। তবে সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নজরদারি করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হিতকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছুটা ধীরে হলেও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় দেশে বর্তমানে সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উল্লেখ করার মতো অনেক অর্জন আছে। বিশেষ করে ল্যাবের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নিশ্চিত করা গেছে অনেক হাসপাতালে। রাজধানীর বাইরেও এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও ন্যাজল ক্যানোলা থেকে শুরু করে অক্সিজেন কনসেনট্রর আছে অনেক হাসপাতালে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতা এখনও সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি; যেভাবে চীন, জার্মান, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর করেছে। তবে আমাদের মধ্যে যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, এটি ধরে রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সফলতা নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে হবে না। এর জন্য সার্ভিল্যান্সের পাশাপাশি সিকোয়েন্সিং করে যেতে হবে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। তবে এগুলো করোনা শেষ হয়ে গেছে ভেবেই ফেলে রাখা যাবে না। বরং এই সফলতাগুলোকে স্থায়ীত্ব দিতে হবে এবং আরও কার্যকর করতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কিছু অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় আমরা খুব ভালো কিছু করেছি এমনটা বলা যাবে না। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যেসব ঘাটতি ছিল তার কিছুক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানোসহ আরও বেশকিছু বিষয়ে উন্নতি দেখা গেছে। কিন্তু এগুলোর পরিচর্যা জরুরি। একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যে বরাদ্দ অনেক কমে গেছে। অর্থাৎ গুরুত্ব কমে গেছে। অথচ আমরা কোভিডের সময় দেখেছি, জনস্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্র থেকে যদি বলি তাহলে বলব, সামনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও এই শিক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি।’

কর্তৃপক্ষ যা বলছে

কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সফলতা বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে প্রভাবের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যকর সিদ্ধান্তে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে এ পরিস্থিতি যেন আর কখনোই খারাপের দিকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’

করোনা সংক্রমণের তিন বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালোভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে। এখনো অনেক দেশে চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন রোগী খুবই কম পাচ্ছি। আগে আমাদের একটা ল্যাব ছিল। এখন কিন্তু ল্যাব সারাদেশে। যে কেউ চাইলেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারে এখন। হাসপাতালগুলোও অনেক উন্নত হয়েছে। হাই-ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা, অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো থেকে শুরু করা আমরা চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংখ্যাও বাড়িয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণ এমনিতেই তো আর কমে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সবাই যেভাবে কাজ করেছে তার ফসল বর্তমান পরিস্থিতি। কিন্তুই তাও আমাদের সজাগ থাকতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের সবাই জানে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমরা দ্রুত জনসংখ্যার অধিকাংশকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এনেছি। অথচ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিনেশন শুরুই করতে পারেনি।’ এ সময় তিনি কেউ ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

করোনার ৩ বছর সফল স্বাস্থ্য খাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর