Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার ৩ বছর: প্রস্তুতি ঘাটতি থাকলেও সফল স্বাস্থ্য খাত (পর্ব-২)

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২৩ ১০:০৩

ঢাকা: ২০২০ সালের ৮ মার্চ যখন সংক্রমণ শনাক্ত হয় তখন থেকেই মূলত প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয় সামনে আসতে থাকে। তবে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ সংক্রমণ শনাক্তের তিন বছর পার হওয়ার সময় করোনা মোকাবিলায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অর্থায়নে করা একটি গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি। সেমিনারে জানানো হয়, কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য যে ধরনের সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে তা ছিল না। একইভাবে প্রথম বছর পার করেও দেখা যায় নমুনা পরীক্ষাসহ বিভিন্ন স্তরের হাসপাতালে আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ও চিকিৎসাসেবার প্রস্তুতিতেও কমতি ছিল।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পূর্ণ নতুন একটা অতিমারি ভাইরাস মোকাবিলায় যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার ছিল অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে সেটা করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। একইসঙ্গে ভাইরাস মোকাবিলার পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসা পদ্ধতি বিষয়েও কোনো সম্পূরক ধারণা ছিল না। পুরো বিশ্বজুড়েই দেখা যায় একই অবস্থা। দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবেই নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি সামনে আসে। একইসঙ্গে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা নিয়েও অপ্রতুলতার বিষয়টি উঠে আসে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের ঘাটতির পাশাপাশি আরও অনেক দুর্বলতার বিষয় সামনে আসে। তবে সফল ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি ধীরে ধীরে সব ঘাটতি কাটিয়ে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন সফল। অতিমারি শেষ না হলেও বর্তমানে স্থিতিশীল দেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি। তবে করোনা মোকাবিলা যেসব অর্জন ও সফলতা লাভ করেছে স্বাস্থ্যসেবা খাত সেগুলোকে ধরে রাখতে হবে। আর সেজন্য প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা।

বিজ্ঞাপন

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বেড়েছে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

দেশে প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের স্ক্রিনিং নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন বন্দরে যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার দাবি জানালেও সেটা নিয়ে দেখা যায় সমন্বয়হীনতার। তবে ধীরে ধীরে সেখানেও পরিবর্তন আসে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে ১২টি ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন করা হয়। এছাড়াও সেখানে হেলথ স্ক্রিনিং কার্যক্রমের এসওপি, হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম এবং প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফর্ম প্রস্তুত করা হয়। পাশাপাশি বন্দরগুলোতে স্থাপন করা হয় হেলথ স্ক্রিনিং বুথ বা ডেস্ক। এর পাশাপাশি বিভিন্ন ফ্লাইটের পাইলট, ক্রু, এয়ারলাইন্স অপারেটর এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হেলথ ডিক্লারেশন ফর্মসহ তাদের দায়িত্ব বিষয়ে জানিয়ে আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

বর্তমানে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দু’টি সমুদ্রবন্দর, দু’টি রেলওয়ে স্টেশন এবং ২৩টি স্থলবন্দরে যাত্রীদের স্ক্রিনিং করা হয়। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত এই বন্দরগুলোতে মোট ৬১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯৫ জন যাত্রীকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে।

বেড়েছে কোয়ারেনটাইন কার্যক্রমের পরিধি

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি চীনের হুবেই শহর থেকে ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে আনার সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানানো হয়। তারা দেশে আসার পরে ১৪ দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আশকোনার হজ ক্যাম্পে স্থাপিত ‘আইসোলেশন ইউনিটে’ রাখার কথাও জানানো হয়। তবে এই কোয়ারেনটাইন কার্যক্রমে শুরুর দিকে দেখা যায় নানা রকমের সমন্বয়হীনতা। ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। বর্তমানে রাজধানীতে তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইন সেন্টার আছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় মোট ৬২৯টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার প্রস্তুত আছে।

এখন পর্যন্ত দেশে ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬ জনকে কোয়ারেনটাইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কোভিড-১৯ নিশ্চিত রোগীদের আইসোলেশন নিশ্চিত করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে গাইডলাইন ও সচেতনতা তৈরি প্রচারণা

কোভিড-১৯ প্রতিরোধের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশে নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আতঙ্কের পাশাপাশি গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এগুলো মোকাবিলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা চালায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এছাড়াও কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কারিগরি নির্দেশনাবিষয়ক ১০টি জাতীয় গাইডলাইন, ২৮টি অন্যান্য নির্দেশিকা, চারটি এসওপি এবং ১৩টি গণ সচেতনতামূলক উপকরণ তৈরি করা হয়। এর পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ও মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় গাইডলাইন।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের চিকিৎসায় বেড়েছে হাসপাতাল

প্রাথমিকভাবে রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পাশাপাশি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তবে ধীরে ধীরে দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বর্তমানে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৬০টি শয্যা এবং এক হাজার ১৮৬টি আইসিইউ আছে। এর মধ্যে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ১২ হাজার ৮৩৪টি শয্যা ও ১১৭৪টি আইসিইউ খালি আছে। সারাদেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসার জন্য মোট ৬৯৫টি এইচডিইউ শয্যা আছে। এর মাঝে বর্তমানে ৬৮১টি শয্যা খালি আছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসায় হাসপাতালে বেড়েছে সক্ষমতাও

প্রাথমিকভাবে সারাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে তৈরি হয় নানা রকমের জটিলতা। এর মাঝে অন্যতম হাসপাতালে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসায় জরুরি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলাসহ গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন সিলিন্ডার ও কনসেনট্রেটর না থাকা। বর্তমানে সারাদেশে মোট ২ হাজার ৪৮টি হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, ২৯ হাজার ৫৬৩টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ২ হাজার ৪৭৭টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সরবরাহ করা হয়েছে।

হাসপাতালে বেড়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ব্যবস্থা

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রাথমিক ধাপে দেশে অক্সিজেন সংকটের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা না হলেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পরে এটি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অক্সিজেন সরবরাহ সংকটের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আতঙ্ক বাড়তে থাক। তবে দ্রুত সেই পরিস্থিতির সামাল দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। বর্তমানে দেশের সকল জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ১২০টি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গতি বেড়েছে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনায়

সঠিক ধারণা না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। তবে ধীরে ধীরে তা কাটতে থাকে। দেশের বিভিন্ন বন্দরে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্যানিটারি পরিদর্শক ও পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে থাকা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। এই কার্যক্রম এখনো চালু আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

এছাড়াও দেশের ৬৪ টি জেলার পাঁচ হাজার ১০০ চিকিৎসক এবং এক হাজার ৭০০ নার্সকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট ও ইনফেকশন প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম এখনো চলমান আছে। কোভিড-১৯ ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনের দশম সংস্করণের কাজ প্রায় শেষের পথে। এই গাইডলাইন অনুযায়ীই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।

হটলাইনে টেলিমেডিসিন সেবায় বেড়েছে গতি

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের পরে প্রাথমিকভাবে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার জন্য ১০৬৫৫ হটলাইন নম্বর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ ও ৩৩৩ হটলাইনে সেবা দেওয়া শুরু করা হয়। এখন পর্যন্ত মোট ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৯ হাজারন ৬৩৬ জন ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও রোগ নজরদারি, কন্টাক্ট ট্রেসিংসহ কোভিড-১৯ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়েও গতি বেড়েছে। দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারিভাবে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যেকোনো মারাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইএইচআর (২০০৫) এর নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলমান থাকবে। এর পাশাপাশি জরুরি প্রস্তুতি শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থল, নৌ এবং বিমান বন্দরগুলোতে এডিবি ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপনের বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

দেশে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনের প্রভাবে পড়েছে বাংলাদেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতিপ্রকৃতিতে। ফলে সাম্প্রতিক দেখা যাচ্ছে সংক্রমণ শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে। তবে সিকোয়েন্সিং করে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নজরদারি করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হিতকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কিছুটা ধীরে হলেও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় দেশে বর্তমানে সক্ষমতা বেড়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উল্লেখ করার মতো অনেক অর্জন আছে। বিশেষ করে ল্যাবের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নিশ্চিত করা গেছে অনেক হাসপাতালে। রাজধানীর বাইরেও এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও ন্যাজল ক্যানোলা থেকে শুরু করে অক্সিজেন কনসেনট্রর আছে অনেক হাসপাতালে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্বলতা এখনও সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি; যেভাবে চীন, জার্মান, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর করেছে। তবে আমাদের মধ্যে যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, এটি ধরে রাখতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই সফলতা নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে হবে না। এর জন্য সার্ভিল্যান্সের পাশাপাশি সিকোয়েন্সিং করে যেতে হবে। এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। তবে এগুলো করোনা শেষ হয়ে গেছে ভেবেই ফেলে রাখা যাবে না। বরং এই সফলতাগুলোকে স্থায়ীত্ব দিতে হবে এবং আরও কার্যকর করতে হবে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কিছু অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় আমরা খুব ভালো কিছু করেছি এমনটা বলা যাবে না। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থায় যেসব ঘাটতি ছিল তার কিছুক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন, ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানোসহ আরও বেশকিছু বিষয়ে উন্নতি দেখা গেছে। কিন্তু এগুলোর পরিচর্যা জরুরি। একইসঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যে বরাদ্দ অনেক কমে গেছে। অর্থাৎ গুরুত্ব কমে গেছে। অথচ আমরা কোভিডের সময় দেখেছি, জনস্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্র থেকে যদি বলি তাহলে বলব, সামনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও এই শিক্ষার যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি।’

কর্তৃপক্ষ যা বলছে

কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সফলতা বিষয়ে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে প্রভাবের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যকর সিদ্ধান্তে এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে এ পরিস্থিতি যেন আর কখনোই খারাপের দিকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’

করোনা সংক্রমণের তিন বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের তুলনায় ভালোভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে। এখনো অনেক দেশে চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু আমরা এখন রোগী খুবই কম পাচ্ছি। আগে আমাদের একটা ল্যাব ছিল। এখন কিন্তু ল্যাব সারাদেশে। যে কেউ চাইলেই নমুনা পরীক্ষা করাতে পারে এখন। হাসপাতালগুলোও অনেক উন্নত হয়েছে। হাই-ফ্লো ন্যাজল ক্যানোলা, অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো থেকে শুরু করা আমরা চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংখ্যাও বাড়িয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণ এমনিতেই তো আর কমে যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের সবাই যেভাবে কাজ করেছে তার ফসল বর্তমান পরিস্থিতি। কিন্তুই তাও আমাদের সজাগ থাকতে হবে। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনে বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের সবাই জানে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। আমরা দ্রুত জনসংখ্যার অধিকাংশকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এনেছি। অথচ বিশ্বের অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিনেশন শুরুই করতে পারেনি।’ এ সময় তিনি কেউ ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকলে কেন্দ্রে গিয়ে নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

করোনা প্রস্তুতি ঘাটতি স্বাস্থ্য খাত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর