১৪ বছরে বদলে গেছে ময়মনসিংহ, উপহার নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
১০ মার্চ ২০২৩ ২৩:২৬
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার উন্নয়ন উপহার নিয়ে ময়মনসিংহ যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যে সরকারের টানা মেয়াদে বিভিন্ন সেক্টরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে বদলে গেছে গোটা ময়মনসিংহ। উন্নয়নের বার্তা নিয়ে শনিবার (১১ মার্চ) ময়মনসিংহ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগদানের পাশাপাশি এখন থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার আরও শতাধিক উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ নভেম্বরের পর আগামীকাল শনিবার ময়মনসিংহ যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমন উপলক্ষে গোটা ময়মনসিংহ বিভাগে এখন সাজ সাজ রব। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সবাই। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভাসছে ময়মনসিংহ। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত।
জনসভাস্থল সার্কিট হাউজ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল নৌকা আকৃতির মঞ্চ। রঙিন বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে গোটা মাঠ। বাঁশের ব্যারিকেড, আর্চওয়ে দিয়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে মাঠে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান, মোড়গুলোকে সাজানো হয়েছে রঙ বেরঙের সাজে। তোরণ নির্মাণের পাশাপাশি ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। বিভাগীয় শহরের বাইরের সড়কগুলোতেও নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। এসব ব্যানার-ফেস্টুন, তোরণে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা। বিকেলের জনসভা সফল করতে সকাল থেকে জড়ো হবেন তারা।
১০৩টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শনিবার
ময়মনসিংহ বিভাগীয় জনসভার শুরুতে সার্কিট হাউজ মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক যোগে ১০৩টি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করবেন। এরমধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সমাপ্ত ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধন হতে যাওযা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন জায়গায় ছবির ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, ময়মনসিংহ সদরের চর সিরতায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপণাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প, ২১টি বিদ্যালয় ও কলেজ এর ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ময়মনসিংহ জেলায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজী, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নতুন হসপিটাল নির্মাণ; জামালপুরের মাদারগঞ্জ, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় গোরবাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, জেলা আইনজীবী সমিতির মূলভবন শহীদ এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম ভবন ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ উদ্বোধন।
এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর উদ্বোধন করবেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল নির্মাণ, শেখ রেহানা হল নির্মাণ, রোজী জামাল হল নির্মাণ, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট ৫ তলা ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ, শেরপুর (কানাসাখোলা)- ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ, ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনমেয়াদের বিগত বছরগুলোতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে পাঁচশ’ শয্যা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট স্থাপন, ময়মনসিংহকে বিভাগ ও পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণসহ শিক্ষা বোর্ড স্থাপন ও পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ খনন, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ককে চারলেনে উন্নীতকরণ, বানার নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, পাইথল ইউনিয়নের গয়েশপুর থেকে গফরগাঁও উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ, চর কামারিয়া থেকে নাক কাটার চর হয়ে হাজীপুর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, নিগুয়ারী ইউনিয়নের হুরহাটি থেকে মাখল-ফেরীঘাট-গৈয়ারপার-কালীরঘাট হয়ে নিগুয়ারী ইউনিয়ন পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, টাংগা ইউনিয়নের বারইহাটি থেকে নিগুয়ারী ইউনিয়নের কুরচাই পর্যন্ত পাকাকরণ, দত্তের বাজার ইউনিয়নের মলমল কাচারী থেকে ভাংতি-সাকরা-ঘাগড়া ডিমাইল গোলাবাড়ী হয়ে কান্দি পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ, মাইজবাড়ী থেকে উটিয়া হয়ে নামালংগাইর পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ, যশরা ইউনিয়নের শিবগঞ্জ-ফুটাংগি হয়ে ত্রিশালের ধলা পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ, ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ-বালুঘাট-সন্তোষপুর হয়ে মধুপুর পর্যন্ত ১০কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ, গফরগাঁও উপজেলার শীলা নদীর মোহনায় রাবার ড্যাম নির্মানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পেয়েছে ময়মনসিংহবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ময়মনসিংহবাসী খুশি জানিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ময়মনসিংহবাসী দৃশ্যমান এসব উন্নয়নের সুফল এখন ভোগ করছে।
ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, অতীতে কোন সরকারের আমলে এমন উন্নয়ন হয়নি। দৃশ্যমান এসব উন্নয়নের ফলেই আগামীতে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহবাসীর সব দাবি পূরণ করেছেন।’
এদিকে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল ঐতিহাসিক সার্কিট হাউসের মাঠ পরিদর্শন করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এই জনসভা হবে ময়মনসিংহের ইতিহাসে স্মরণকালের মধ্যে সর্ববৃহৎ। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংকটের কথা বলবেন, সমাধানের কথা বলবেন। সমস্যার কথা বলবেন, উত্তরণের কথা বলবেন। আগামী দিনের জন্য কী করণীয়, আগামী নির্বাচনের জন্য বার্তা দেবেন। অবশ্যই তিনি আওয়ামী লীগের দুর্জয় ঘাটি এই ময়মনসিংহে নৌকার পক্ষে জনগণের সমর্থনর বিষয়টি জনগণের কাছ থেকে আশ্বস্ত হতে চাইবেন। এই ময়মনসিংহে যা উন্নয়ন হয়েছে তা তুলনা করার মতো নয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ আলোকিত হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণ হবে এই জনসভার প্রত্যয়। নতুন করে উন্নয়ন নয়, শেখ হাসিনার কাছে মানুষকে বাঁচানো এখন সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার। ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, অসীম কুমার উকিল, বিপ্লব বড়ুয়া।
এ ছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে