Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাখির কিচিরমিচিরে একদিনের মুখরতা

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৪

ঢাকা: ১২ হাজার বর্গফুটের হলরুমে পা রাখতেই নানা জাতের পাখি কিচিরমিচিরে মুখর। ছোট-বড় নানা আকারের খাঁচায় ভেতরে বসে থাকা রঙ-বেরঙের এসব পাখিকে বলা হয় কেইজ-বার্ড। বিদেশ থেকে আনা কিন্তু পরবর্তীতে দেশেই প্রজনন করে পেলে-পুষে বড় করা এসব পাখি দেখতে ভিড় করেছেন নানা বয়সের মানুষ। কেউ এনেছেন নিজের পোষা পাখি আবার কেউ এসেছেন শুধুই পাখি দেখতে।

শুক্রবার (১০ মার্চ) ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলরুমে এই বার্ড শো আয়োজন করে সরকার নিবন্ধিত বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সৌখিন পাখি পালকদের সংগঠন এভিয়ান কমিউনিটি। ভিন্ন ভিন্ন মিউটেশন বা প্রজননের বাজরিগার, লাভ বার্ড, ফিঞ্চ, ম্যাকাও, কোকাটেল, অ্যামাজন প্যারেট, গ্রে প্যারেট, মংক প্যারেটসহ চল্লিশ প্রজাতির বেশি পাখি নিয়ে হয়ে গেল এভিয়ান এক্সটিক বার্ড শো অ্যান্ড ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩। ছয়শ’র অধিক অংশগ্রহণকারীর হাজারের ওপর পাখির প্রদর্শন হয় এই মেলায়। পরবর্তীতে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে পুরষ্কার দেওয়া হয় পাখি পালকদের।

প্রদর্শনীতে আসা সব পাখি কিন্তু খাঁচায় বদ্ধ নেই। কেউ কেউ আবার রঙিন পালক ছড়িয়ে বাইরেও বসে আছে। তাদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য বা গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে আবার দারুণ ভিড়। এখানেই সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ঘন নীল পালকের আর কমলা বিশাল আকারের ম্যাকাও পাখির জোড়। মালিক হাসান রাজ বলেন, এই প্রজাতির ম্যাকাওয়ের নাম ব্লু অ্যান্ড গোল্ড ম্যাকাও যা দক্ষিণ আফ্রিকা, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ভেনেজুয়েলা ইত্যাদি দেশ থেকে আসে। একেকটি পাখি বাঁচে ষাট বছরের মতো। বাংলাদেশের পরিবেশে দারুণভাবে মানিয়ে নিতে পারে তারা।

জানা গেল এই প্রজাতির একেকটি পাখির বাচ্চার দাম পড়ে এক লাখ তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা। মাসে খরচ আটশ টাকা। কাটাবনে অ্যাংরি বার্ড নামক পেটশপ রয়েছে তার। এবারই প্রথম এই শোতে আসলেন তিনি।

খিলগাঁও থেকে তিনটি পাখি নিয়ে এসেছে চতুর্থ শ্রেণীর ফিয়াদ আর তার বন্ধু। আম্রব্রেলা কাকাতুয়া আর ম্যাকাও পাখি নিয়ে এসেছে তারা। জানা গেল ফিয়াদের বাবাই মূলত এসব পাখির পালক। তবে ফিয়াদ নিজেও এসব পাখি নিয়ে খেলতে ভালবাসে। পাখিদের গোসল করাতে ও খাবার দিতে বাবাকে সাহায্য করতে ভোলে না সে। পাখিদের সঙ্গে খেলতে ভালো লাগলেও পাখিরা খুব ঘর নোংরা করে যা ফিয়াদের ভালো লাগে না। এখানে সবকিছু পরিষ্কার দেখে পাখি প্রদর্শনীতে এসে খুব ভালো লাগছে ফিয়াদের। সঙ্গে থাকা ফিয়াদের বন্ধু মোহাম্মদ আন্নাফির এখানে এত পাখি দেখে খুব ভালো লাগছে। কোন কোন পাখি কথাও বলছে যা দেখে সে মুগ্ধ। বড় হয়ে সেও একজন পাখি পুষতে চায়।

ফার্মগেট থেকে ছেলে আহনাফকে সঙ্গে করে পাখি দেখতে আসছিলেন রোমেল-রীমা দম্পতি। নিজেরাও পাখি পালন করেন। এখানে একই ছাদের নিচে এতরকমের পাখি দেখে উচ্ছ্বসিত আহনাফ।

শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরানারি মেডিসিনের চতুর্থ বর্ষের তিন বন্ধু ইশরাত, পারভেজ ও ইয়াসিনও এসেছেন পাখি দেখতে। পেশাগত কারণেই তাদের এখানে আসা, পাশাপাশি পাখির প্রতি ভালোলাগা তো আছেই।
এভিয়ান কমিউনিটি অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বজলুর রশিদ সেলিম বলেন, পোষা পাখি পালনের উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এই আয়োজন। বাংলাদেশের এভিয়ান সেক্টরের উন্নয়নে ২০১৮ সালের পর দ্বিতীয় বারের মত এই আয়োজন।

আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, প্রথমত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করতে এই উদ্যোগ। বনের পাখি ও খাঁচার পাখির মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে চাই আমরা।

দ্বিতিয়ত, তরুণ প্রজন্মকে মাদকসহ অন্যান্য নেশা থেকে দূরে রাখতে পারে পাখি পালন। একইসঙ্গে এটি বেকারত্ব ঘোচাতেও ভূমিকা রাখে।

তৃতীয়ত, সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ। আমরা বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এসব পাখি নিয়ে আসেই। তারপর দেশেই প্রজনণ করি। সরকার সহযোগিতা করলে আমরা এসব পাখি বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারি। তা ছাড়া এসব পোষা পাখির দেখভাল বন মন্ত্রণালয়ের হাতে না রেখে প্রানী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের হাতে দেওয়া হোক। এছাড়া দেশে এসব বিদেশেই পাখির চিকিৎসা করার মত চিকিৎসক নাই। সরকার বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাখি চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। এসব পাখির খাবারও বিদেশ থেকে আনতে হয় যার জন্য উচ্চমূল্যের আমদানী কর দিতে হয়। পাখিপালনের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমদানি কর কমানো।

বাংলাদেশের পোষা পাখি সেক্টরের উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে এই সংগঠন।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

পাখি পাখি প্রদর্শনী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর