Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্দরের কনটেইনার পাচার চক্রে আনসার ও নিরাপত্তা কর্মীরা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্যভর্তি কনটেইনার পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি সিন্ডিকেটকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। এই সিন্ডিকেটে বন্দরের পরিবহন ও নিরাপত্তা বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী ও আনসার সদস্য এবং কনটেইনার খালাসের সঙ্গে যুক্ত অপারেটররা আছেন। মদভর্তি কনটেইনার পাচারের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষী মোজাম্মেল হোসেন রবিন এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বদাতা বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড (গুপ্তখাল) থেকে তিনটি ট্রেইলরে (লরি) পণ্যবোঝাই দু’টি কনটেইনার বের করে নিয়ে যাবার সময় গেইটে আটকে দেওয়া হয়। দায়িত্বরত একজন গোয়েন্দা সদস্যকে মারধর করে একটি খালি ট্রেইলর নিয়ে চালকের সহকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বাকি দু’টি ট্রেইলর ও কনটেইনার এবং চালক ও সহকারীসহ চারজনকে আটক করেন বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষীরা।

তাদের দেওয়া তথ্যে পরবর্তীতে স্থানীয় ইপিজেড থানা পুলিশ বন্দরের পরিবহন ও নিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত চারজনকে আটক করে। আটক আটজনসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ের অধীন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মারুফ হোসেন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

গ্রেফতার আটজনের মধ্যে বন্দরের চারজন হলেন- পরিবহন বিভাগের নিম্নমান বহিঃসহকারী মো. আব্দুল হাকিম (৩৪), নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের কার্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষী কাজী আবু দাউদ (৪৮) এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা শাখায় পদায়ন হওয়া আনসার সদস্য অনুকুল বিশ্বাস (২৫) ও এনামুল হক।

গ্রেফতার বাকি চারজন হলেন- লরিচালক জালাল উদ্দিন (২৩), আইয়ূব আলী (২৩) ও নাজমুল হোসেন (২৭) এবং সহকারী নুরুল ইসলাম (২০)।

একই মামলায় সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থাকা বন্দরের নিরাপত্তা পরিচালকের দফতরের নিরাপত্তা রক্ষী মোজাম্মেল হোসেন রবিনের (৩৭) সঙ্গে কনটেইনার খালাসের যন্ত্রাংশ পরিচালনায় নিয়োজিত অপারেটরসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

যেসব পণ্য বন্দর থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা হয়েছিল সেগুলো হচ্ছে- আমদানি করা প্রায় ২৯ লাখ টাকার ২৫ মেট্রিকটন প্লাস্টিকের দানা ও প্রায় ৫ লাখ টাকার ৩২ রোল ফেব্রিকস।

ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আটজনকে গ্রেফতারের পর আমরা আদালতের নির্দেশে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। বন্দরের কর্মচারী, আনসার সদস্য, লরিচালক, সহকারী মিলে এটা পুরো একটা চক্র, যারা জাল নথিপত্র দিয়ে কনটেইনার খালাসের চেষ্টার সঙ্গে যুক্ত। সর্বশেষ যে দু’টি কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ড থেকে বের করে নেয়া হচ্ছিল, সেগুলোর জন্য কোনো নথিপত্রও দাখিল করা হয়নি। বন্দরের নিরাপত্তা কর্মী বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়।’

সূত্রমতে, কনটেইনার ইয়ার্ডের গেইটে দুই শিফটে বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের কর্মী এবং একইসঙ্গে তিন শিফটে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। প্রতি শিফটে বন্দরের দু’জন নিরাপত্তা রক্ষী এবং একজন গোয়েন্দা নিরাপত্তা সদস্য থাকেন। তাদের সঙ্গে প্রথম দুই শিফটে তিনজন এবং তৃতীয় শিফটে চারজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাসের পর আমদানিকারকের প্রতিনিধি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের অংশ হিসেবে বন্দরের শুল্ক বিভাগে একটি বিল অব এন্ট্রি প্রদান করে থাকে। বন্দরের যাবতীয় ফি এবং কাস্টমস হাউজে পণ্যের জন্য নির্ধারিত শুল্ক কর পরিশোধ করার পর আমদানিকারককে পণ্য খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়। খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সময় বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। খালাস শেষে দেওয়া ছাড়পত্র নিরাপত্তা বিভাগে জমা দিতে হয়। নিরাপত্তা বিভাগের অনুমোদনের পর ছাড়পত্রের কপি গেইটে জমা দিয়ে তবে পণ্যবাহী পরিবহনকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে পণ্যভর্তি কনটেইনার বের করে নেয়ার ঘটনার পর এখন বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের নজরদারির শিথিলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সূত্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দিন সকাল ৮টায় বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগের এএসআই মারুফ হোসেনের কাজে যোগ দেয়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু তিনি পৌনে ৯টার দিকে গেইটে পৌঁছান। গোয়েন্দা নিরাপত্তা সদস্য নজরুল ইসলাম একাই ট্রেইলরগুলোকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং তাদের হামলার শিকার হন।

ওসি আব্দুল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আমরা তথ্য পেয়েছি, সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থাকা বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষী নথিপত্র জমা না দিয়ে লরিচালকদের ইয়ার্ডে প্রবেশের ব্যবস্থা করেন। তার সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া বন্দরের কর্মচারী ও আনসার সদস্যদের যোগসাজশ আছে। যারা খালাসে জড়িত তারাও পর্যাপ্ত নথি চেক করেননি অথবা নথিপত্র ছাড়াই পণ্য নিয়ে যেতে তাদের সহযোগিতা করেছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে। লরিগুলো যেসব প্রতিষ্ঠানের তাদের কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না সেটাও আমরা যাচাই করে দেখছি।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইয়ার্ড থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে কনটেইনার নিয়ে যাবার সঙ্গে কয়েকজন কর্মচারীর সম্পৃক্ততার তথ্য আমরা পেয়েছি। যেহেতু মামলা হয়েছে, বিষয়টি এখন পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। বন্দরের পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত কমিটি হবে। তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

কনটেইনার পাচার চক্র টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর