Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘২০৪০ সালে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১১ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৬

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যদি প্রতিবছর গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায় তাহলে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।’

শনিবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তিনদিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট’ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করি। তখন দেশের কিছু উন্নয়ন করতে সমর্থ হই। এরপর দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর থেকে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশের ব্যপক অর্থনীতির অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি। এক সময়কার দারিদ্রপিড়ীত, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ কবলেই পরিচিত পেত। তবে এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন বাংলাদেশ বিশ্বে ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, উন্নয়নের রোল মডেল।’

অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি সবার সহযোগিতায় আমারা বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

শক্তিশালী সামষ্টিক মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলো এবং বাণিজ্য সহায়তাকরণ বাংলাদেশে গত ১০ বছরে গড়ে ৬.৫ শতাংশের বেশি হারে জিডিপি অর্জনে সহায়তা করেছে। এমনকি কোভিড-১৯ অভিঘাতে যখন সারাবিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছে তখনও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

আর্থসামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উৎপাদন খাত ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে ব্যক্তিখাতে ভোগবৃদ্ধি যাকে প্রাথমিকভাবে সহায়তা করেছে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ, শক্তিশালি গ্রামীণ অর্থনীতি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ জ্বালানি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন।’

দেশের অভাবনীয় প্রাথমিকভারে রয়েছে আমাদের বেসরকারি খাত। মূলত তাদের নেতৃত্বেই রফতানি আয় ২০০৮ সালে ১৬.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এটা তখনকার যুগে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। আমি মনে করি বেসরকারি খাত যদি আমরা বেশি গুরুত্ব না দেই তাহলে ব্যবসা বাণিজ্য বিনিয়োগ উন্নত করা সম্ভব নয়। সেজন্য এসব খাতের বিকেশে প্রায় সবকিছুই উন্মুক্ত করে দিয়েছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি ২০২৬ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে যাত্রা শুরু করে ২০৩৭ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। আমরা ব্যাপকহারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। এগুলোর মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, গণপরিবহন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত জুনে যুক্ত হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা যে পারি, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি এই একটা সিদ্ধান্তে। এই সেতু শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলেই নয় এই সেতু আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ ও আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে।’

গত ডিসেম্বরে আমরা মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করেছি। এসব সাফল্যের উপরে দাঁড়িয়েই বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য বলে, মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

রূপকল্প ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করার প্রসঙ্গ তুলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেখানে বেসরকারি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরানিতকরণ এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণের কৌশলগত একটি পথরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ৫ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা যায় তাহলে আশা করা হচ্ছে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে আশা করি।’

রূপকল্প ২০৪১’র প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সরকার এফডিআই’সহ বেসরকারি বিনিয়োগকে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে গ্রহণ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১.৪৩ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। বাংলাদেশ জ্বালানি পানি লজিস্টিক পরিবহন খাতে তিনশো পঞ্চাশ মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০২৫সালে মধ্যে শুধু লজিস্টিক খাতে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে আশা করা যাচ্ছে।’

বাংলাদেশ প্রায় ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশ। আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে বিশ্বাস করি। যুক্তরাজ্য বা জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করি বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আশাবাদ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটা একটু বেশি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু তারপরও করতে তো আপত্তি নেই। সবসময় আমাদের একটা ভালো লক্ষ্য থাকবে। ২০২৫ সাল সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ধনিক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ তিনশো কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে। প্রাশ্চ্য এবং পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন হিসাবে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে যোগাযোগ ক্ষেত্রে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল খাত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সে প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্মা দরজি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উপ-মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জিয়াংচেন ঝাং, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

সম্মেলনে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আরিরাতসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সিইও এবং ২শ’র বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী, বিশ্বের ১৭টি দেশের ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন এবং রফতানি ও স্থানীয় ভোক্তা বাজারের পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা হবে।

সারাবাংলা/এনআর/এমও

অর্থনীতি উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন ডলার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর