Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গোয়েন্দা কর্মকর্তার গাড়িচালক থেকে ভয়ঙ্কর প্রতারক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিটের (ডিবি) একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। গাড়ি চালাতে গিয়ে একসময় নিজেই ‘ডিবি অফিসার’ সেজে বসলেন ওই চালক। শুরু হল তার প্রতারণার রকমফের। থানায় ও বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে তদবির, মামলা-গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে অর্থ আদায় করতে লাগলেন।

প্রকৃত ডিবি অফিসার বদলি হয়ে চট্টগ্রাম ছাড়লেন। কিন্তু তার গাড়িচালক প্রতারণা ছাড়তে পারলেন না। সেনাবাহিনী, র‌্যাব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিল্পগ্রুপের কর্মকর্তা কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেজে সমানে লোক ঠকিয়ে যাচ্ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে র‌্যাব পরিচয়ে গ্রেফতারের হুমকি দেওয়ার পর নিজেকে আর রক্ষা করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাতে গ্রেফতার হলেন র‌্যাবের হাতেই। শনিবার সকালে র‌্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেফতারের এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গ্রেফতার রিয়াদ বিন সেলিমের (২৪) বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভায়। বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার হাজীরপোল এলাকায়।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে জানান, ‘একজন ডিবি অফিসারের পারসোনাল গাড়ির চালক থাকা অবস্থায় প্রতারণা শুরু করেন রিয়াদ। ওই অফিসার বিষয়টি জানতেন না। বছর তিনেক আগে তিনি বদলি হয়ে সিএমপি থেকে চলে যান। এরপর রিয়াদ আরও জোরেশোরে প্রতারণায় নামেন।’

র‌্যাব জানায়, ডিবি অফিসারের গাড়িচালক হিসেবে রিয়াদ বিন সেলিম বিভিন্ন থানায় অবাধে যাতায়াত করতেন। ভুক্তভোগী লোকজনকে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থায়ও পরিচয়ের সুযোগ ব্যবহার করে তদবির করতেন। একপর্যায়ে তদবিরই তার পেশা হয়ে যায়। নিজেকে ডিবি অফিসার পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা নেওয়া শুরু করেন।

বিজ্ঞাপন

সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের আওতাধীন ঠিকাদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এস আলম গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তা, বেসরকারি ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক এবং প্রকৌশলী সেজেও প্রতারণা করেন বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সেজে মফস্বল পর্যায়ের কয়েকজন ‘সংবাদকর্মীকে’ সচিবালয়ে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর মেহেদী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে চাকরির শখ ছিল রিয়াদের। সে ক্যাপ্টেন পদবির একটি ভূয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে সেটিকে প্রতারণার কাজে লাগায়। তার কাঁধে থাকত সেনাবাহিনীর নির্ধারিত রঙের একটি ব্যাগ। এসব পরিচয় একাধিকবার ব্যবহার করে টাকা-পয়সা হাতানোর পর কৌশল পাল্টে র‌্যাবের কর্মকর্তা সেজে বসেন। র‌্যাবের নির্ধারিত সিরিয়ালের একটি মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন। সেই নম্বর দিয়ে র‌্যাবের মনোগ্রাম ব্যবহার করে হোয়াটস অ্যাপে একটি অ্যাকাউন্টও তৈরি করেন। পরিচয় লেখা হয়- এডি অপারেশন্স, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার।’

‘বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান সাহেবকে র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে হোয়াটস অ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে মামলা ও গ্রেফতারের হুমকি দেয়। তিনি এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করার পর আমরা রিয়াদকে শনাক্ত করি। একইভাবে দলটির আরও কয়েকজন নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে রিয়াদ হয়রানি করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এছাড়া র‌্যাব কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সে অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের অর্ডার দিয়ে বিনামূল্যে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে তার মোবাইলে।’

রিয়াদের কাছ থেকে সেনাসদস্যরা ব্যবহার করেন এমন রঙ ও আকৃতির ব্যাগ, ইয়াবা এবং অন্তঃত ৫০টি ভূয়া পরিচয় পত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান মেজর মেহেদী হাসান।

সারাবাংলা/আরডি/ইআ

প্রতারক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর