সরকার পতনের আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে: গণতন্ত্র মঞ্চ
১১ মার্চ ২০২৩ ২০:৪৯
ঢাকা: বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তা এগিয়ে নেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক ওয়াদা করেছেন। কিন্তু ওয়াদা তিনি রাখেন না।
শনিবার (১১ মার্চ) পল্টন মোড়ে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ ও বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে যুগপৎ আন্দোলনের ১৪ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে নেতারা এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহ-সভাপতি কে এম জাবির।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিশাল বহর নিয়ে জনগণের টাকায় দেশ-বিদেশে ঘুরছেন তার ক্ষমতা টিকেয়ে রাখার জন্য। কিন্তু তাতে মানুষের কী লাভ হয়েছে। সরকার যতই তালবাহানা করুক, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে। গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপৎ আন্দোলনে যারা আছেন কেউ তার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী অনেক সময় অনেক ওয়াদা করেছেন কিন্তু কখনোই কথা রাখেন না। তার কথায় আর কারও আস্থা নাই। উনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতেই হবে।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সংগঠক মাসুদ রানাকে গত রাতে আশুলিয়ায় হামলা করে আহত করা হয়েছে। সারাদেশে মানুষকে হামলা-মামলা করে আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে চায়। কিন্তু মানুষের সামনে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা ছাড়া উপায় নাই। সারাদেশের মানুষের কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। এই সরকার দেশের মানুষকে বন্ধক রেখে তাদের অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। এদের পতন নিশ্চিত করতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ক্ষমতার সুষ্ঠু বণ্টন নাই। গণতন্ত্র মঞ্চ স্পষ্ট করেছে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কার কাছে কতটা থাকবে, কীভাবে বণ্টন হবে, তার কাঠামো ঠিক করতে হবে। রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার না করলে আমাদের সংকটের সমাধান হবে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সিস্টেম লস ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও নিত্যপণ্যের দাম অনেক সহনীয় পর্যায়ে থাকতো। কিন্তু সরকার নিয়ন্ত্রণ করে না। তারা সিস্টেম লসের নামে লুটপাট করে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘লুটপাট আর অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বর্তমান সরকার আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করছে। দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তিস্তা চুক্তি নিয়ে অবিলম্বে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে জোর তৎপরতা নিতে হবে।’
গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক বলেন, ‘বর্তমান সরকার উন্নয়নের নামে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে এবং পাচার করছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এমন পর্যায়ে গেছে সাধারণ মানুষের সংসার চালানো মুশকিল হয়ে গেছে। বিরোধীদলের আন্দোলন-সংগ্রাম ব্যাহত করার জন্য সরকার সারাদেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি তৈরি করছে। অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘১৪ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই সরকারের পদত্যাগ ও একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং সরকারের উদ্যোগে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করে সাংবিধান সংস্কার করে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের পথে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে সবাইকে অংশ নিতে হবে।’
জেএসডির সহ-সভাপতি এড. কে এম জাবের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে অবিলম্বে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম