সংঘর্ষের জেরে রাবি বন্ধ ঘোষণা
১১ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৮
রাজশাহী: স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জেরে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে দুই দিন বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১২ ও ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। ১৪ মার্চ মঙ্গলবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা যথারীতি চলবে।
শনিবার রাতে (১১ মার্চ) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারের আদেশক্রমে এ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাবি জনসংযোগ দফতরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাসের সিটে বসা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিনোদপুর গেইটে পুলিশ বক্সে আগুন দেয় স্থানীয়রা। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয় দুটি মোটরসাইকেলও। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অন্তত ২৫-৩০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেন। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত রকিব ও খালিদ সাইফুল্লাহ নামের দুই শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে ঝামেলা হয় স্থানীয় একজনের। পরে বাসটি বিনোদপুর বাজারে এলে সেটি আটকে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে এক দোকানি এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাজে আচরন করেন। পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় দোকানিরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। ওই সময় শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এর পর শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ফের বিনোদপুর গেটের দিকে লাঠিসোটা নিয়ে দোকানিদের ধাওয়া করে।
এদিকে, পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও তার কয়েকজন অনুসারী ঘটনাস্থলে এলে স্থানীয়রা তাদেরও ধাওয়া করে। তারা ধাওয়া খেয়ে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল রেখে চলে যান। এ সময় দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে আগুন দেয় স্থানীয়রা। এছাড়াও বিনোদপুর গেট পুলিশ বক্স ও কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, স্থানীয়রা তুচ্ছ ঘটনায় প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। তারা এর আগেও অনেকবার শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করেছে। এই ঘটনা ওইসবের পুনরাবৃত্তি।
এদিকে, আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে যান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর। এ সময় উপ-উপাচার্য বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। অধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্সে মেডিকেলে নেওয়া যাচ্ছে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে নেওয়া হচ্ছে। অনেক রক্তের প্রয়োজন।’ রক্তদাতাদের রাজশাহী মেডিকেলে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সংঘর্ষ বন্ধে প্রশাসন পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন কি-না? এর উত্তরে দুই উপ-উপাচার্যই কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তারা বলেন, ‘এসব নিয়ে কথা বলার সময় এখন নয়।’
এদিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা টিয়ারসেল ছুড়েছি। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।’
সারাবাংলা/পিটিএম