‘আমরা সবকিছুতেই এখন পরামর্শকনির্ভর’
১১ মার্চ ২০২৩ ২৩:৩৩
ঢাকা: শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ না করায় সবকিছুতেই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হয় বলে আক্ষেপ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, আমরা সবকিছুতেই এখন পরামর্শকনির্ভর। একটা সেতু নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে। একটা চারতলা ভবন নির্মাণ করব, পরামর্শক লাগবে!
শনিবার (১১ মার্চ) রাতে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইবি) এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ভূমিকম্পজনিত দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস: প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা করেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘হালকার ওপর দিয়ে না হেঁটে আমাদের সমস্যার গভীরে যেতে হবে। দুর্যোগ হলে কোথা থেকে যান-যন্ত্রপাতি আসবে সেজন্য আমাদের এখন আর অপেক্ষা করতে হয় না। সব কর্তৃপক্ষের কাছে এখন পর্যাপ্ত যান-যন্ত্রপাতি দেওয়া আছে। আমরা সেদিক থেকে অনেক দূর এগোলেও এখন আমাদের করণীয় হবে মূল সমস্যা অনুধাবন করে ঝুঁকি হ্রাসে শিক্ষা কার্যক্রমে এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। সেভাবেই আমাদের পেশাজীবীদের তৈরি করতে হবে। দায়িত্ব সঠিকভাবে বণ্টন করতে হবে এবং তা তদারকি করে, পরিপালন করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।’
শিক্ষা কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ না করায় সবকিছুতেই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হয় বলে মন্তব্য করে শেখ তাপস বলেন, ‘যদি ভুল হয় তাহলে সংশোধন করে দিয়েন। এ পর্যন্ত যত প্রকৌশলীকে (সিটি করপোরেশনে) নিয়োগের জন্য আমি সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তারা আমাকে বলেছেন- বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের পাঠ্যক্রমে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং একটি আলাদা বিশেষায়িত শিক্ষা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেমন আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হয়, আমি মনে করি- প্রকৌশল শিক্ষায়ও তেমনি আলাদা আলাদা বিশেষজ্ঞ হওয়া উচিত।’
দুর্ঘটনা ঘটলে অনেকের ক্যামেরায় মুখ দেখানো নিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ঘটনা ঘটে গেলে দায়িত্ব কার ওপর দিয়ে পার পাওয়া যাবে সেটা নিয়েই আমরা ব্যস্ত থাকি। দুর্যোগ হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে উদ্ধারকর্মীরা যেতে পারে না। কারণ উৎসুক মানুষ সেলফি তোলার জন্য এতই ব্যস্ত থাকে যে, উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এটা (উদ্বার কাজ) কি ফায়ার সার্ভিস করবে? নাকি সিটি করপোরেশন; রেড ক্রিসেন্ট, র্যাব, নাকি পুলিশ করবে? এমনকি যাদের দায়িত্ব না তারাও সেখানে হাজির হয়ে যান। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, অনেকে কর্তৃপক্ষসহ হাজির। যে কর্তৃপক্ষের সেখানে কোনো দায়িত্বই নেই। সবাই ক্যামেরা পেলে দু’টো কথা বলতে পারলেই মনে করে, দায়িত্ব হাসিল হয়ে গেল।’
সেমিনারে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী আহমেদ আনসারি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বক্তারা বলেন ভূমিকম্পের ঝুঁকি রোধে প্রস্তুতির গুরুত্ব তুলে ধরেন। ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে সঠিক নগর পরিকল্পনা, ভবন নির্মাণে সাবধানতা, এবং ভবন নির্মাণে নীতিমালা মেনে চলতে হবে। এছাড়া সরকারের সকল সংস্থাগুলোর নজরদারি জোরদার করাও প্রয়োজন।
আইবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রনক আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইবি’র সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. নুরুল হুদা, আইইবি’র পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূর, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্ট বাংলাদেশের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান, আরবান রিজিলিয়েন্স প্রজেক্টের (রাজউক পার্ট) প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল লতিফ হেলালী এবং আইবি’র সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন শিবলু প্রমুখ।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম