Thursday 03 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিকল্পিত আগুন: তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২৩ ২০:২৩ | আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৬

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনাটি পরিকল্পিত। নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে কারা এই আগুন লাগিয়েছে তাদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। আগুনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা জরুরি বলছে তদন্ত কমিটি।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে গঠিত ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মামলা দায়ের, চিরুনি অভিযান, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে।

রোববার (১২ মার্চ) বিকেল ৪টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংকালে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চ দুপুরে আগুনের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ নিয়ে ৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণপত্র হিসেবে ৭৪টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে অনন্ত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে।

রোহিঙ্গারা বলছেন, এটি পরিকল্পিত নাশকতা। রোহিঙ্গারা যে সব তথ্য, যে সব নাম দিয়েছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন নাম পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার পর তদন্ত করে তাদের শনাক্ত করার পক্ষে তদন্ত কমিটি।

তিনি জানান, দুপুর আড়াইটায় আগুনের সূত্রপাত হয়। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে এক স্থানে না, অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এটি নাশকতা প্রমাণ করে। একইসঙ্গে আগুন লাগার আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এটিও নাশকতা। রোহিঙ্গারা আগুন নেভাতে গেলে অনেকেই নিষেধ করেছে, এটি সত্য। তবে এটি কৌশলে করা হয়েছে হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, ‘আগুন নেভানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরি।’

তিনি জানান, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে জড়িতদের শনাক্ত করতে মামলা করা জরুরি।

প্রতিবেদনে করা সুপারিশ সমুহের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারে মতো প্রশস্ত করা যেতে পারে। ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে ভিন্ন কিছু যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি এমন কিছুর ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যতত্রত মার্কেট করা থেকে বিরত এবং বড় রাস্তার ধারব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লকে ব্লকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে নিরাপত্তাবেষ্টনী স্থাপন করা।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর ক্যাম্পে আগুনে বসতঘরসহ ২ হাজার ৮০৫টি নানা স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯২৫ জন রোহিঙ্গা।

২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু, ৫ শতাধিক আহত হন। ওই সময় পুড়ে গিয়েছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।

সারাবাংলা/একে

আগুন উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর