Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলা পূর্বপরিকল্পিত’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২৩ ২১:২০

ঢাকা: পঞ্চগড়ের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত এবং ক্ষমতাসীনদের কাজ বলে মনে করছে বিএনপি গঠিত তদন্ত কমিটি।

রোববার (১২ মার্চ) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির প্রধান দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা গত ৮ তারিখে ঘটনাস্থলে গিয়েছি, ভিকটিমদের বাড়িতে গিয়েছি, কথা বলেছি। সবচাইতে দূঃখজনক যে, হামলায় বা হত্যাকাণ্ডে যারা অংশগ্রহণ করে, লুটতরাজ করে তাদের মধ্যে কোনো লজ্জাবোধ নেই এবং লুকিয়ে থাকার কোনো উদ্যোগে তাদের মধ্যে নেই। তারা মহাসমারোহে মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে যাদের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের সম্মুখীন হয়। এটি হলো সেখানের বাস্তবতা। আর পুরো ঘটনাটা পূর্বপরিকল্পিত এবং ক্ষমতাসীনদের কাজ।’

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে যে, এটি পরিকল্পিত এবং যারা করেছে তাদের নাম-ধামও আমাদেরকে বলেছে। মোতাহার, আবদুর রহমানের নাম বলেছে তারা। অথচ যে মামলা করা হয়েছে সেই মামলায় তাদের নাম নাই। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন যখন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন তখন ভিকটিমরা তাকে বলেছে, যারা আমাদের ঘর-বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে তারা তো আপনার সঙ্গেই আছে।’

তিনি বলেন, ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সব মানুষ একটি জায়গায় রয়েছে, তাদেরকে পাহারা দিচ্ছে দলীয় ব্যক্তিবর্গ। সেখানে বিজিবি, পুলিশের অবস্থান লক্ষ করেছি। কিন্তু যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার, সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা গাফেলতির কথা আমরা ভিকটিমদের কাছ থেকে শুনেছি।’

বিজ্ঞাপন

তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধবংসযজ্ঞ অবলোকন করেছেন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে। ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্তচিৎকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো বোধোদয় হয়নি। ডিসি-এসপি তিন ঘণ্টা পরে আসার পর তাদের মধ্যে কিছুটা উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এজন্য আমরা মনে করি, এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। দেশে এখন যে ব্যবস্থা চলছে এর নাম মাস্তানতন্ত্র। ক্ষমতাসীনরাই এটা করছে’— বলেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি তথা ডিসি-এসপির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলাম। তারা দুপুর আড়াইটায় সময় দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা যাওয়ার পর সেটি তারা ক্যানসেল করে দেয়। এ ঘটনায় নিজেদেরকে খুব অকিঞ্চিতকর মনে হয় আমাদের। আমরা যারা গিয়েছিলাম আর কিছু না হোকে আমরা সিনিয়র সিটিজেন, যথেষ্ট বয়স হয়েছে আমাদের। আমাদের সঙ্গে দেখা করতে তারা যে অপরাগকতা জানায় এতেই তাদের মন-মানসিকতা বোঝা যায়।’

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘যারা অপরাধ করেছে তাদেরকে ধরা হয় না, ধরা হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের। বেশ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তিকে এবং ঘটনাস্থল থেকে দূরে অবস্থানকারী বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এদের কয়েকজন রেল মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা গেছে বলে ভিকটিমরা বলেছেন। রেল মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভিকটিমরা বলেছেন, আপনি যাদেরকে নিয়ে এসেছেন তারা এই বাড়ি-ঘর পোঁড়ানোর জন্য দায়ী, তারা তো আপনার সঙ্গেই আছে। এই ঘটনা থেকে আমরা উপলব্ধি করছি যে, যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফিরে না আসবে, আইনের শাসন ফিরে না আসবে, ততদিন এই মানবিক মর্যাদার পুনরুদ্ধার হবে না।’

বিজ্ঞাপন

পঞ্চগড়ের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান হাফিজ উদ্দিন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পঞ্চগড়ের ঘটনার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘পঞ্চগড়ের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। আমরা মনে করি, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনকে ডাইভারশন করতে, জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতে এবং দেশে-বিদেশে বিএনপি সম্পর্কে একটা নেতিবাচক বার্তা দিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এখন পুলিশ সেখানে মারাত্মকভাবে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। এরইমধ্যে ১৮১ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং ১২ থেকে ১৬ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এক হাজার লোককে বাই নেইম গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে একটা অসৎ উদ্দেশ্যে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে তারা এই কাজটা করেছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও আছে, পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। আগের দিনই যারা সেখানে গিয়েছেন তারা বলেছেন যে, এয়ারমার্ক করে দেওয়া আছে কোনটা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়ি, কোনটা অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ি। চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে এবং যখন আক্রমণ করা হয়েছে তখন চিহ্নিত লোকদের বাড়িই আক্রমণ করা হয়েছে।’

‘আমরা এটির ঘোরতর নিন্দা করেছি। এখনো আমরা এর নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি যে, সরকার প্রকৃত আসামিদের আড়াল করবার জন্য গণহারে, গহরহ, ঢালাওভাবে গ্রেফতার শুরু করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ।

সারাবাংলা/এজেড/একে

তদন্ত কমিটি ফখরুল বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর