১৩ মার্চ ১৯৭১: ইয়াহিয়ার সামরিক ফরমানকে বাঙালির বৃদ্ধাঙ্গুলি
১৩ মার্চ ২০২৩ ০৯:০৬
ঢাকা: ১৩ মার্চ ১৯৭১। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে মার্চের ১৩তম দিনও সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালতে অনুপস্থিত থাকে বাঙালি অফিসার ও কর্মচারীরা। এ পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বাধীন সরকার সামরিক ফরমান জারি করে ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে প্রতিরক্ষা বিভাগের বেসামরিক কর্মচারীদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে চাকরিচ্যুত ও পলাতক ঘোষণা করে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে এবং নির্দেশ অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড হবে বলে ভয় দেখানো হয়।
ওই নির্দেশ জারির পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য বাংলার জনগণের প্রচণ্ড দাবির কথা ঘোষণা করছি, ঠিক তখন নতুন করে এ ধরনের সামরিক নির্দেশ জারি জনসাধারণকে উসকানি দেওয়ার শামিল।’
মুক্তির জন্য শপথ নেওয়া বীর বাঙালি ইয়াহিয়া খানের সামরিক ফরমানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অফিস-আদালত বর্জন করে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাসভবন, যানবাহনে কালো পতাকা উত্তোলন ও প্রদর্শন অব্যাহত রাখে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী কাজ চলে।
পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপি ও কাইয়ুমপন্থি মুসলিম লীগ ছাড়া বিরোধীদলের সব নেতা পাকিস্তানের অনিবার্য ভাঙন রোধে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
ওই বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিম লীগ, কনভেনশন লীগ, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, জমিয়তে ওলামায়ে পাকিস্তানের নেতারা অংশ নেন। ওয়ালী ন্যাপ আগেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মীসহ ২৬৫ জন বিদেশি নাগরিক ঢাকা ছেড়ে যান।
সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আফাজউদ্দিন ফকির এক বিবৃতিতে লেটার অব অথরিটির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অবিলম্বে পূর্বাঞ্চলের প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব একজন বাঙালি জেনারেলের কাছে হস্তান্তর, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবকটি ব্যাটিলিয়নের পরিচালনা কর্তৃত্ব বাঙালি অফিসারদের হাতে অর্পণ এবং গত এক মাসে পূর্ব বাংলায় যে অতিরিক্ত পাকিস্তানি সৈন্য আনা হয়েছে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ঢাকাসহ পূর্ববাংলার বড় শহরগুলো ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল-সমাবেশে মুখরিত। ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়ন সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণ থেকে বিশাল মশাল মিছিল বের করে।
বিকেলে চট্টগ্রাম সংগ্রাম পরিষদ লালদীঘিতে জনসভা করে। জনসভায় নেতারা সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বেগম উমরতুল ফজলের সভাপতিত্বে নারীদের সমাবেশে বাংলাদেশের জনগণের পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিলাস দ্রব্য বর্জন ও কালোব্যাজ ধারণের জন্য নারী-পুরুষ সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকায় স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ইকবাল হল (বর্তমান শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) প্রাঙ্গণে পরিষদের সব আঞ্চলিক শাখার আহ্বায়ক, সম্পাদক ও সদস্যদের সভা আহ্বান করেন।
চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদীন ও সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল হাকিম পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব ও পদক বর্জন করেন।
সারাবাংলা/এজেড/এমও