Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সমুদ্রসীমানা চূড়ান্ত না করেই আমরা ২৮ ব্লক ঘোষণা করেছিলাম’

গোলাম সামদানী, সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে
১৩ মার্চ ২০২৩ ২০:০২

ঢাকা : বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের অন্যতম নায়ক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেছেন, আমরা সমুদ্রসীমানা চূড়ান্ত না করেই ২৮টি ব্লক ঘোষণা করলাম। এই ঘোষণার পর মিয়ানমার বলল, সমুদ্রের পূর্বদিকের ১৭টি ব্লক তাদের। অন্যদিকে পশ্চিম দিকের ১০টি ব্লক দাবি করল ভারত। ভারত কেবল দাবিই করল না, নিজেরা এই ব্লকগুলোর ওপর আলাদা ব্লক ঘোষণা করল।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের সিন্দাবাদ এক্সপেরিয়েন্স রিসোর্টে আয়োজিত ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ব্লু ট্যুরিজম’ বিষয়ে আবাসিক প্রশিক্ষণে মো. খুরশেদ আলম এ সব কথা বলেন। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফ‘র সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম।

খুরশেদ আলম বলেন, ‘২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য টেন্ডার ঘোষণা করলে কর্ণকোফিলিপস নামের একটি কোম্পনি ৯টি ব্লক পেয়েছিল। এরা ছিল সর্বোচ্চ বিডার। কিন্তু তখন সরকারের পক্ষে সর্বোচ্চ বিডারকেও ব্লক দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ ২৮টি ব্লকের মধ্যে ২৭টি ব্লকের বিষয়ে ভারত ও মিয়ানমারের আপত্তি থাকায় অবশিষ্ট ছিল কেবল একটি ব্লক। তখন ওই একটি ব্লক কাটছাঁট করে কর্ণকোফিলিপসকে দেওয়া হল। এটিই ছিল বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানার সামগ্রিক অবস্থান।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমরা সমুদ্রসীমা নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলিনি। আমাদের জাতীয় জীবনে এটি নিয়ে কোনো চর্চা হয়নি। এটি নিয়ে কেউ কোনো লেখালেখি করেননি, কোনো আলোচনা করেননি। সাগরের সম্পদ যে আমাদের দরকার এটি নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। বলা যায় সমুদ্রসীমা নিয়ে আমাদের দেশে কোনো আলোচনাই হয়নি।’

‘এই অবস্থানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন আমাকে ডেকে বলেন, আমরা ২৮টি ব্লক ঘোষণা করলাম এখন ২৭টি ব্লকই দুই দেশ দাবি করছে। তাহলে কি আমাদের সাগর থাকবে না? তখন আমি বললাম থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বললেন কী করা যায়? আমি বললাম, কোর্টে যাওয়া যায়। তার আগে চাইলে দুই দেশের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করতে আলোচনা করা যেতে পারে। তখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমরা তো ৩৫ বছর আলোচনা করলাম। ফল হলো একটি ব্লক। আমরা আর কতদিন আলোচনা করব। জবাবে আমি বললাম, তাহলে কোর্টে যাওয়া যাবে। হাম্বকে একটি কোর্ট আছে, সেটি হলো ইটলস। নেদারল্যান্ড একটা কোর্ট আছে, ইন্টারন্যাশনার কোর্ট অব জাস্টিস। এই দুই কোর্টে গেলে দুইপক্ষকেই রাজি হতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

খুরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক নিয়মে জানি ভারত কোনোদিনই এই কোর্টে যেতে রাজি হবে না। আর ভারত না গেলে মিয়ানমারও কোর্টে যাবে না। কোর্টের মতামত ছাড়া যাওয়ার একটা পথ ছিল। সেটি হলো আরবিটাল ট্রাইবুনাল। তাই তখন আমরা আরবিটেশনাল ট্রাইবুনালে গেলাম। কোনো দেশ আরবিটেশনালে গেলে অন্য দেশের পারমিশন লাগে না, অনুমোদন লাগে না। আমরা আরবিটেশন করলাম। আর এটি করতে আমার কিছুটা সময় লেগেছে, কোর্ট কেস করতে। কারণ আগে তো এটা করা হয়নি। আমরা আরবিটেশন করলাম।’

প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের এপ্রিলে বললেন, আমরা আদালতে যাব। তখন আমি প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আদালতে যাওয়ার একটি খারাপ দিক রয়েছে। সেটি হলো- এই আদালতের রায়ের কোনো আপিল নেই। বাংলাদেশে যেমন জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, আপিল কোর্ট রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের বিপক্ষে কোনো আপিল করা যাবে না। যা দেবে তা মেনে নিতে হবে। সেটি আমাদের পক্ষে যাক আর বিপক্ষে যাক। তারপর প্রধানমন্ত্রী বললেন তোমার কাছে কি তথ্য নাই, রায় পক্ষে আনার মতো। তখন আমি বললাম তথ্য আছে, আমরা আশাবাদী আমরা পাব। কিন্তু এই দায়িত্বটা কিন্তু রাজনীতিকভাবে আপনার ওপর আসবে। তারপরেও প্রধানমন্ত্রী পিছপা হননি। তিনি তখন বললেন, দায়িত্ব আমি নিলাম, তুমি কেইস রেডি করো। আমরা কোর্টে যাব। ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর ভারত ও মিয়ানমারের দুই দেশের রাষ্ট্রদৃতকে একসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডাকি। কারণ আলাদাভাবে ডাকি, তখন মিয়ানমার যদি ভারতকে বলে দেই বাংলাদেশ তোমাকে কেইসের নোটিশ ধরিয়ে দেবে। তোমরা এসো না। তখন তো আর তারা আসবে না। আর রাষ্ট্রদৃততে ডাকলে না আসলে তো আর কিছু করারও থাকে না। তাই দুই দেশের রাষ্ট্রদৃতকে একসঙ্গে ডেকে দুই রুমে আলাদা বসিয়ে প্রথমে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদৃতকে নোটিশ দিলাম। একইসঙ্গে মায়ানমারের অ্যাম্বাসিকেও লিখিত নোটিশ দিলাম। একইভাবে ভারত ও ভারতের অ্যাম্বাসিকেও নোটিশ দেওয়া হলো। তার মানে হলো ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর থেকে আমাদের মামলা শুরু হলো। পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার বলল, আমরা ইটলসে যাব। আমরা বললাম, কোনো সমস্যা নেই।

খুরশেদ আলম বলেন, ‘মিয়ানমারের কেসের সময় আমরা ভারতকে বলেছিলাম তোমরা আমাদের সঙ্গে আসো। ভারত না করে দিলো। ভারত দেখলো মিয়ানমার এবং ভারত দুই দেশেরই দাবি এক সমদৃরত্ব পদ্ধতি। এই ক্ষেত্রে মিয়ানমার যদি কোর্টে জিতে গেলে ভারতকে আর কষ্ট করতে হবে না। কাজেই ভারত আমাদের সঙ্গে যোগদান করতে অস্বীকার করলো। তা না হলে তিন দেশের সমুদ্রসীমা একবারেই ২৮ মাসে নির্ধারণ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সমুদ্রসীমানা নির্ধারণের সময় মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে তারা আন্তর্জাতিক আদালতের উকিলদের অর্থ পরিশোধ করতে পারছিল না। কিন্তু এই ধরনের সব সহযোগিতা ভারত মিয়ানমারকে করেছে। ভারতের পুরো উকিল সেট মিয়ানমারের হয়ে কাজ করেছে। পরবর্তীতে ভারতের আলাদা কেইস হলো। আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল পশ্চিম দিকে আমাদের চারটা নদী আছে। ইছামতি, কালিদি, রায়মঙ্গল ও হাড়িভাঙ্গা। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হলো এই চারটি নদীর একটিরও সীমানা চূড়ান্ত হয়নি। ১৫০ মাইল লম্বা নদীর সীমানা ঠিক না হলে অসুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের অংশে অনেক ইটভাটা এবং শ্মশান থাকার কারণে বাংলাদেশের অংশে নদী ভাঙন হচ্ছে। বাংলাদেশের সাতক্ষীরার একটা মৌজাই ভেঙে গেছে। এই ক্ষেত্রে নদীর মধ্যভাগ হবে সীমানা। ফলে বাংলাদেশের অংশ ভেঙে গেলে ভারতের লাভ। মজার বিষয় হলো আইযুব খান ১৯৬৬ সালের ১ মে নাফ নদীর সীমানা নির্ধারণ করেছে। যদি নাফ নদীর সীমানা ঠিক করা হলে বাংলাদেশের সহিত মিয়ানমারের অনেক সমস্যা দেখা দিত।’

খুরশেদ আলম বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের পশ্চিম দিকের চারটি নদীতে সীমানা নেই। সর্বশেষ নদীর মধ্যে একটি দ্বীপের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৬ সালে ভারত সারাবিশ্বে জানিয়ে দেই, এখানে তাদের একটা দ্বীপ রয়েছে। যেই দ্বীপের নাম দেয় তারা নিউমোর আইল্যান্ড। কিন্তু আইন অনুযায়ী দ্বীপ হলো জোয়ারের সময় এটি পানির ওপরে থাকে। আর চর হলো জোয়ারের সময় পানিতে ডোবে যায়। ১৯৭৬ সালের চিঠি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আসে। তখন বাংলাদেশের নৌবাহিনী সেখানে গিয়ে দেখে সত্যি একটা দ্বীপ সেখানে রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে দাবি করে এটি দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ। কারণ আমাদের উত্তর তালপট্টি দ্বীপ ছিল। দাবি করার বেসিস ছিল, হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর পানি এই দ্বীপের পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গেছে দাবি করে বাংলদেশ। আর ভারত দাবি করে এই দ্বীপের পূবদিক দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। দুই দেশই দ্বীপ দাবি করলে। ১৯৮১ সালে ভারত সৈন্যসামন্ত পাঠিয়ে চারটা বড় জাহাজ নিয়ে দ্বীপটি দখল করে নিল। তখন বাংলাদেশের নৌবাহিনী সেখানে গিয়েছিল। তবে ভারত দখল করার ২০ দিন পর প্রতিকূল আব্হাওয়ার কারণে সেখানে থেকে তারা চলে যায়।’

‘এইবার যখন আমরা তালপট্রি নিয়ে কোর্টে গেলাম। ভারত বললো সেখানে দ্বীপ আছে। আমরা বললাম সেখানে দ্বীপ নেই। মূলত ১৯৮৫ সালে উড়ির চর ঝড়ে দ্বীপটির বালি সরে গিয়ে মাঠির নিচে তলিয়ে গেছে।’

খুরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা ৬/৭টি কেইস তুলো ধরার পর আমরা ২০০ মাইল পেলাম। আমরা চেয়েছিলাম ১৮০ ডিগ্রি। কোর্ট আমাদের দিলো সাড়ে ১৭৭ ডিগ্রি। ভারতের সঙ্গে আমাদের মোট বিরোধ ছিল ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। আমাদের দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। বাকি ৫ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার ওদের দেওয়া হলো। এরপর এলো মহীসোপান। সমুদ্রের মহীসোপান হলো ৩৫০ মাইল। এই দাবি দিতে হয় ১০ বছরের মধ্যে। আমাদের দাবি দেওয়ার সময় ছিল ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত। এই দাবি দেওয়ার জন্য আমাদের সিসমিট সার্ভে করা দরকার। প্রমাণ করতে হবে বাংলাদেশের মাটি সাগরের তলদেশ দিয়ে স্লোব হয়ে ৩৫০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি সিসমিট সার্ভে ছাড়া সম্ভব না। ২০০৯ সাল আমি যোগদান করে দেখলাম, আমাদের কিছুই করা হয়নি। যদিও ১৩০ জন কর্মকর্তা ট্রেনিং করেছে। ফলে আমরা সর্ভে করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৮০ কোটি টাকা চাইলাম, তিনি তা দিলেন। আমরা নেদারল্যান্ড সরকারের সঙ্গে কথা বলে ৩২ কোটি টাকা দিয়ে এই সার্ভেটা করালাম ২০১০ সালে। বাকি টাকা আমরা সরকারকে ফেরত দিলাম। সার্ভে করে ২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতিসংঘে জমা দিয়ে বললাম, আমাদের ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত মহীসোপান দরকার। তখন ভারত ও মিয়ানমার এতে প্রবল আপত্তি তোলে বলল, বাংলাদেশের যদি এই মহীসোপান দরকারই থাকতো তাহলে তারা আরও আগেই জাতিসংঘে আসত। কারণ মিয়ানমার জমা দিয়েছে ২০০৮ সালে। বাংলাদেশ জমা দিয়েছে ২০১১ সালে।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার মহীসোপান দাবি করার পর তিন বছরে কোনো মিডিয়ায় এটি নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। মিয়ানমারের সিরিয়াল ছিল ১৬ আর বাংলাদেশের সিরিয়াল ৫৫। এটি নিয়ে কোনো যুক্তি দিতে পারছিলাম না। তারপরেও আমরা বলছি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য সমুদ্রসীমা একটিই। ফলে এই মহীসোপান ছাড়া বাংলাদেশ চলতে পারবে না। বিপরীতে মায়ানমার এবং ভারতের একাধিক সমুদ্র রয়েছে। বাংলাদেশ একটি গরিব দেশ। ফলে এখন সমুদ্রসীমানা চূড়ান্ত করে না দিলে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ আদালতে আসার সামর্থ্য নেই। চূড়ান্তভাবে আদালত ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ভারতের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমানা চূড়ান্ত হয়। এতে করে আমাদের সীমানার পরিমাণ হলো ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার।’

তিনি বলেন, ‘সাগরে আমাদের মুলভূমির ৮১ শতাংশের সমপরিমাণ জায়গা আমাদের সাগরে রয়েছে। এটি আমিন দিয়ে মাপলেও ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার হবে। কিন্তু আদালতে যাওয়ার আগে আমাদের সমুদ্র সীমা ছিল ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও কম।’

খুরশেদ আলম আরও বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ জলসীমা হলো নদীর মুখ থেকে বেইসলাইন পর্যন্ত। আর বেইস লাইন থেকে ১২ মাইল হলো টেরিটোয়েলসি বা রাষ্ট্রীয় জলসীমা। আর বেইস লাইন থেকে ২৪ মাইল হলো কন্টিকোয়াজোন, এটিকে কাস্টমসের এলাকা বলা হয়। আর বেইসলাইন থেকে ২০০ মাইল হলো ইজেড বা একচ্ছত্র অর্থনৈতিক জোন। আর বেইসলাইন থেকে ৩৫০ কিলোমিটার হলো মহীসোপান। এই মহীসোপানের বাইরে যে মাটি রয়েছে ওটাকে বলে এরিয়া। সেখানে সবাই যেতে পারে। এটি দেখাশোনা করে আন্তর্জাতিক সমুদ্র কর্তৃপক্ষ। এর অফিস জ্যামাইকাতে।’

সারাবাংলা/জিএস/একে

ভারত মহীসোপান মিয়ানমার সমুদ্রসীমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর