Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কার সঙ্গে সংলাপ করব?— সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৩ মার্চ ২০২৩ ২১:১৯

ঢাকা: আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কার সঙ্গে সংলাপ করব? হ্যাঁ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংলাপ করেছি। তার রেজাল্টটা কি? নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করে নাই। নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াল, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করল।

সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সাড়ে চারটায় গণভবনে কাতার সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্যে বিভিন্ন বৈঠকের বিষয়ে সংক্ষিপ্তভাবে মূল কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেজন্যই সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কতগুলো কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনই নেবে।’

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন, ছবিসহ ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ সরকারই নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইন করে দিয়েছে। স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও অবাধ করা দরকার। নির্বাচন কমিশন সবসময় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল, অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল। আমরা কিন্তু সেখান থেকেও তাদের স্বাধীন করে দিয়েছি। বাজেটে তাদের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখান থেকে তারা খরচ করতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ অবাধ, নিরপেক্ষ করেই আমরা গড়ে তুলেছি। এই কারণে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে- সেটাতো আমাদেরই স্লোগান।’ তিনি বলেন, ইভিএম করতে চেয়েছিলাম, কারণ সবাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দেবে, খুব দ্রুত রেজাল্ট পাবে। কিন্তু অনেকেরই আপত্তি। যখন সবারই এত আপত্তি, তাই নির্বাচন কমিশন যতটুকু তারা পারে করবে। তবে করতে পারলে ভালো হতো। মানুষ অন্তত আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তার ভোটাধিকারটা প্রয়োগ করতে পারত। সেটা নিয়ে যেহেতু এত আলোচনা-সমালোচনা, সেহেতু এটা আমরা নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে যে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। কারণ এটার জন্য অনেক ধৈর্যের দরকার। অনেক গালমন্দ, অনেক কিছুতো শুনতে হয়। প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনে যাচ্ছি। আর আমরাই সুযোগ করে দিয়েছি। কারণ, বাংলাদেশে আগে এত টেলিভিশনও ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তাই সকলের সুবিধাও আছে কথা বলার। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সেজন্য দেশ-বিদেশে থেকেও আমাদের সমালোচনা করার সুযোগ পাচ্ছে। আমাদের করে দেওয়া জিনিস দিয়ে সুযোগ পেয়ে সমালোচনা করে। আবার এ কথাও শুনতে হয়, কিছুই করি নাই।’

সমালোচনার মুখেও আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ-কর্তব্যবোধ নিয়ে এগিয়ে চলার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। সক্ষম হয়েছি এ কারণে, জনগণই হচ্ছে আমাদের মূল শক্তি। জনগণ আমাদের পাশে ছিল সেজন্য।’

তিনি বলেন, ‘যখন কোভিড-১৯ দেখা দিল, দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকের ছিল যে, এটা মোকাবিলা আমরা করতে পারব কি-না। আমি কিন্তু বলেছিলাম, আমরা পারব।’ দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি, কেউ কিছু করতে পারবে না। হয়তো সাময়িক কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু জনগণই সেগুলা মোকাবিলা করবে।’

জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সবগুলো আওয়ামী লীগ পূরণ করেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের আগে প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের উপরে উঠেছিল। আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। আমাদের দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম। করোনাকালীন এই দুই বছর আর যুদ্ধকালীন সময়টা যদি না থাকত আরও অন্তত ২ থেকে ৩ শতাংশ দারিদ্র্য আমরা কমিয়ে আনতে পারতাম। নানা কারণে হয়তো এটা হয়নি। কিন্তু এখানে থেমে থাকলেতো হবে না। হতাশ হওয়ারও কিছু নাই। অন্তত আমি কখনো হতাশ হই না।’

খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের মৃত্যুর সময় তাকে অপমানের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত অপমানের পর তাদের সঙ্গে আবার কিসের বৈঠক? আমার পরিষ্কার কথা, ভদ্রতা জানে না। তাদের সঙ্গে বৈঠকের কি আছে? কেউ পারবেন আপনার বাবা-মা’র হত্যাকারীর সঙ্গে বৈঠক করতে? আপনাকে যদি কেউ এইভাবে অপমান করে, আপনারা পারবেন? যেটুকু সহ্য করেছি শুধু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে।’

খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘তার ভাই-বোন এসে যখন আমার কাছে, রেহানার কাছে আকুতি করল- তখন তার সাজাটা স্থগিত করে চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এলডিসি-৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ বিন খলিফা আল থানি ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে এলডিসি সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৪ মার্চ কাতার সফরে যান। সেখান থেকে ৮ মার্চ তিনি দেশে ফেরেন।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

প্রধানমন্ত্রী সংলাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর