অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
১৪ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৭
ঢাকা: বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সংকটময় সন্ধিক্ষণে আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। যা বেশিরভাগ প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন অর্থায়নকে অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর করে তুলছে। তাই বৈশ্বিক অর্থনীতি তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে না আসা পর্যন্ত এজন্য সহজ শর্তে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নত দেশগুলোকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।’
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বলরুমে বাংলাদেশ ও এডিবির অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অন্য অতিথিরা বক্তব্য রাখেন। এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বৃহত্তম প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা দেখিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। এছাড়া মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন বহুমুখী কর্ম পরিচালনা করে যাচ্ছি। পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরব, মর্যাদা ও যোগ্যতার প্রতীক; যে বাংলাদেশ পারে।’
এসময় উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকারের আগামী দিনের লক্ষ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমাদের প্রত্যেকটা অর্জন আমরা ধাপে ধাপে উত্তরণ ঘটাচ্ছি। আমরা চট করে কোথাও লাফ দিয়ে পড়িনি। আমাদের আশু লক্ষ্য হলো ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে মর্যাদা অর্জন করা। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নতসমৃদ্ধ জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে।’ সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনা অতিমারিসহ বিভিন্ন সময়ে ‘এডিবি’ আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য জন্যও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সন্তুষ্টচিত্তে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের অত্যন্ত দুঃসময়ে এডিবি উদ্ভাবনী অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ব একাধিক চ্যালেঞ্জর সম্মুখীন। আমরা সত্যি এই সংকটের তাৎক্ষণিক সমাধানও দেখতে পাচ্ছি না। এটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে না। সারা বিশ্বব্যাপী এই সমস্যাটা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষগুলি আরও কষ্ট পাচ্ছে। বেশিরভাগ দেশে খাদ্যঘাটতি, জ্বালানি এবং আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবক্ষয় এবং মুদ্রাস্ফীতি আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
‘সবচেয়ে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হল এগুলো বৈশ্বিক সম্প্রদায় দরিদ্র্যতম অংশকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করছে। এই সংকটময় সন্ধিক্ষণে আমরা হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে অনেক উন্নয়ন অংশীদার সুদের হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থ্যাৎ একাধিক অর্থনৈতিক ধাক্কার প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি’, বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈশ্বিক অর্থনীতি তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে না আসা পর্যন্ত এজন্য সহজ শর্তে অর্থায়ন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি এবং উন্নত দেশগুলি এ বিষয়ে বিশেষ নজর দিবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা কারও কাছে করুণা চাই না, দয়া ভিক্ষা চাই না। আমরা ন্যায্য অধিকার চাই। বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের অংশীদার হিসাবে আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যাই দাবি করছি। একইভাবে বৈশ্বিক ব্যবসায়ীক অংশীদাররা অপ্রয়োজনীয় বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করছে। যা সার্বিক সরবরাহ শৃংখলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য আইসিটিভিত্তিক উদ্যোক্তা, মানসম্পন্ন অবকাঠামো, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের উপর কৌশলগত গুরুত্বারোপসহ অর্থায়নে নমনীয় পদ্ধতি এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য এডিবির প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একসঙ্গে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটা উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশ সরকার দারিদ্র ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে এসডিজির মহৎ বৈশ্বিক লক্ষ্যসমূহ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এডিবির অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতায় একইভাবে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য আরও বড় আকারে কাজে লাগবে বলে বিশ্বাস করি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এডিবির প্রেসিডেন্ট আসাকাওয়াকে বাংলাদেশ সফর জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশ এডিবির ৫০বছর পূর্তি উদযাপনের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। পাশাপাশি সামনের দিনে এডিবির সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে, শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ করেন তিনি।
সারাবাংলা/এনআর/এমও
উন্নয়ন অংশীদার প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সুদহার