শেষ হচ্ছে হজ নিবন্ধন, বাদ রয়ে গেল কোটার ৩৪ হাজার
১৫ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪৭
ঢাকা: চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। সেই হিসাব ধরা হলে এখন নিবন্ধন শেষ করে ভিসা প্রক্রিয়া শুরুর কথা। কিন্তু এবারের হজ যাত্রার চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। বার বার সময় বাড়িয়েও হজে যেতে মুসুল্লি পাওয়া যাচ্ছে না। বরং নিবন্ধিতদের কেউ কেউ নিবন্ধন বাতিল করে টাকা তুলে নিয়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো বলছে, এবার অতিরিক্ত ব্যয় ধরার কারণেই ইচ্ছে থাকার পরও হজে যেতে মানুষের আগ্রহ কম। সুত্র মতে, এ পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯৩ হাজার ৬৫ জন নিবন্ধন করেছেন। কোটা পূরণ হতে এখনো বাকি ৩৪ হাজার ১৩৩ জন। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) নিবন্ধনের সময় শেষ হচ্ছে।
সৌদি আরবের নির্ধারণ করা কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বরাবরের মতো এবারও সরকারি বেসরকারিভাবে আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর একদিন পর ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। চলতি বছর হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। এই সময়ের মধ্যে কোটার বিপরীতে কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হওয়ায় ফের ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এর পরও কোটার অর্ধেক যাত্রী নিবন্ধন না করায় ফের ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হচ্ছে না। এতবার সময় বাড়ানোর পরেও কোটা পূরণ করা যায়নি। বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত ব্যালোটি, নন ব্যালোটি মিলিয়ে নিবন্ধন করেছে মাত্র ৯৩ হাজার ৬৫ জন। কোটা পূরণ হতে এখনো বাকি ৩৪ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৪৭৯ জন আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩ হাজার ৫৮৬ জন নিবন্ধন করেছেন।
এদিকে, হজ প্যাকেজের মূল্য কমাতে হাইকোর্টে রিট হয়। সেখানে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়া অন্য কোনো বিমানে হজ যাত্রী যাওয়ার সুযোগ না রাখা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ বেশি নেওয়ার ঘটনাকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়কে একটি অথর্ব মন্ত্রণালয় বলেও মূল্যায়ন করেন আদালত। এ সময় হজের খরচ বাড়ার বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে হজের খরচ বাড়ার কারণ হাইকোর্টের কাছে তুলে ধরে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিবন্ধনের সময় প্রতি বছরই সিরিয়াল মেইনটেইন করে বাড়ানো হয়। তবে এবার খরচ কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় একটু সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গেল বছর যে ৬০ হাজার মুসুল্লি হজে গেছেন তখনো টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এবার সৌদি আরব কিছু নিয়মে পরিবর্তন আনায় বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়েছে। বাংলাদেশ অংশে যতটুকু ব্যয় কেবল ততটুকুই বাড়ানো হয়েছে।’
হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবারের হজ খরচ রেকর্ড ভেঙেছে। মানুষের ইচ্ছা থাকার পরও অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে নিবন্ধন করছেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘হজ যাত্রীদের সুবিধার্থে হাব সব সময় পাশে ছিল, থাকবে।’
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম