৫ সিটির মেয়র পদে জনপ্রিয়রাই মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে
১৫ মার্চ ২০২৩ ২৩:৩৪
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি করপোরেশনে ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে হবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিটি করপোরেশনগুলো হলো- গাজীপুর, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট ও রবিশাল। এদিকে, আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটিতে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার টার্গেটে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে জনগণের কাছে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
বিএনপি সিটি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না- সেই ভাবনা মাথায় নিয়েই জনপ্রিয়তাকে মাপকাঠি করে মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে টানা মেয়াদে থাকা ক্ষমতাসীন দলটি। এমন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই আসন্ন রমজান থেকেই পাঁচ সিটিতেই সম্ভাব্য জনপ্রিয় প্রার্থীদের ভোটের মাঠে থাকার নির্দেশ দেবে দলটির হাইকমান্ড।
২০১৮ সালে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ভোট ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে রাজশাহী সিটিতে নৌকার প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশালে নৌকার প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সিলেটে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হয়। ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চার বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনাভাইরাস মহামারির সময় ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি। তবে এবার সিলেট সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা। এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নাম বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। এছাড়াও মেয়র পদে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী স্থানীয় নেতাকর্মীসহ জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের গোপনে ধারণ করা কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও গাজীপুর জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ মুখর হয়ে ওঠে। ফলে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর পরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। যদিও সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে কয়েকদিন আগে গাজীপুরের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা চিঠিতে এই ক্ষমা করার কথা জানানো হয়েছে।
তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিতর্কিত জাহাঙ্গীর আলম ফের মনোনয়ন পাবেন কি না তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এবারও তিনি ছাড়া অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন। গত বছর ১৯ নভেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি হিসেবে আজমত উল্লাহ খান পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আতাউল্লাহ মণ্ডল। জাহাঙ্গীর বহিষ্কার হওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে দলের নীতিনির্ধারকদের মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে আগে রাজধানীসংলগ্ন জেলা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা দলটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে বরিশাল সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। নানা কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসেন তিনি। এর আগে, বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও’র বাসভবনে হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিবাদ দেখা দেয়। পরে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সমস্যার সমাধানও হয়। এবারও স্থানীয় জনগণ ও নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তায় তিনি মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক মনোয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এছাড়া রাজশাহী সিটি করপোরশনে ফের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মনোনয়ন পাবেন কি না তা নির্ভর করছে দলটির হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের উপর। কারণ তিনি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। দলটি আগামীতে সভাপতিমণ্ডলীর কোনো সদস্যকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মেয়র পদে মনোনয়ন দেবেন কি না তা নিয়েও অলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যোগ্য-সুযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। সেই প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আমরা জানি, সার্বিকভাবে পাঁচ সিটি করপোরেশনে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেছে। আর এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মানুষ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে নৌকায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচন অব্যশই গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্ব বহন করে। সেই গুরুত্ব থেকেই আওয়ামী লীগ যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোট করা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারি দল হিসেবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ায় আমরা বদ্ধপরিকর। সেই লক্ষ্যেই ইতোমধ্যে আমাদের দলীয় নির্দেশনা স্থানীয় নেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাই দলীয় প্রধান সবদিক মাথায় নিয়েই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেবেন।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম