‘যারা ইসলামে বিশ্বাস করে তারা অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল’
১৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:০৪
ঢাকা: শান্তির ধর্ম ইসলামের উদারনীতির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা সত্যিকারে ইসলামে বিশ্বাস করে তারা অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল। ধর্মের নাম ব্যবহার করে, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস করে এলে ইসলামকে মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। অথচ ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে শান্তির ধর্ম। কে ধর্মী, কে বিধর্মী, কে কাফের, কে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, কে করে না— সে নির্দেশ দেওয়ার অধিকার আল্লাহ কোনো মানুষকে দেননি।’
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সারা দেশে তৃতীয় ধাপে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা সত্যিকার ইসলামে বিশ্বাস করে তাদের অন্য ধর্মের প্রতিও সহনশীল হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা চাই, সব ধর্মের সমান অধিকার। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। শেষ বিচার তো আল্লাহ করবেন। বিচারের ভার আল্লাহ কোনো মানুষকে দেননি।’
সরকার প্রধান আরও বলেন, ‘ইসলাম সব ধর্মের প্রতি সহনশীলতা দেখানোর শিক্ষা দেয়। আমাদের নবীও আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন। প্রত্যেক মানুষ যার যার কর্মফল ভোগ করবে। আমি অন্যায় করলে, আমার কর্মফল তো আরেকজন ভোগ করবে না। জীবন তো আল্লাহ দিয়েছেন। জীবন দেওয়ার মালিকও তিনি, নেওয়ার মালিকও তিনি।’
ইসলামে নারীর অধিকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামই কিন্তু নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা যেমন কোনো কোনো দেশে দেখি নারীদের শিক্ষা নিতে দেবে না। ইসলাম কিন্তু সেই শিক্ষা দেয় না। ইসলাম কিন্তু সবাইকে শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছে। নবীও আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন।’
মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্ম পালনের সঙ্গে সঙ্গে যেন ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ হয়, সে জন্য আমরা মসজিদগুলো করে দিয়েছি। আমরা চাই আমাদের দেশটা উন্নত হোক, এগিয়ে যাক। বাল্যবিবাহ, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন।’
আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘রমজান কৃচ্ছ্রতা সাধনের সময় হলেও দেশের কিছু ব্যবসায়ী জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় অতি মুনাফার লোভে। খাদ্যে ভেজাল, মজুতদারি, কালোবাজারি ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অযথা মানুষকে কষ্ট দেয়া গর্হিত কাজ।’
এসব বিষয়ে মসজিদে প্রচার করতে মাওলানাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মসজিদে জুমার খুতবার সময় আপনারা (ইমাম) কালোবাজারি, মজুতদারি বা খাদ্যে ভেজাল দেওয়া যে গর্হিত কাজ এ ব্যাপারে মানুষকে আরও সচেতন করবেন।’
নিম্নআয়ের মানুষকে বিশেষ কার্ড দেওয়া হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেশি দামে চাল কিনে মাত্র ৩০ টাকা কেজি দরে আমরা তাদের দিচ্ছি। রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা আরও ১ কোটি মানুষের মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করব। সাধারণ মানুষ যাতে কষ্ট না পায়; চাল, তেল, চিনি, ডাল, যা যা দরকার সেগুলো যাতে ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারে সেজন্য টিসিবির মাধ্যমে আমরা এ সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’
দেশকে এগিয়ে নিতে সবার দোয়া চেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে- পবিত্র রমজানে আপনাদের কাছে দোয়া চাই। আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ যেন আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সে জন্য দোয়া চাই।’
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বরিশালের আগৈলঝাড়া, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার মডেল মসজিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান। গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
সারাবাংলা/এনআর/এমও
অন্য ধর্ম ইসলাম ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মডেল মসজিদ সরকার প্রধান