আরাভ খানকে কি আদৌ দেশে আনা সম্ভব?
১৬ মার্চ ২০২৩ ২১:৫০
ঢাকা: রবিউল ইসলাম। পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলায় অন্যতম আসামি। নিজেকে কখনো আপন, কখনো সোহাগ, আবার কখনো হৃদয় পরিচয়ে লুকিয়ে রেখে এখন দুবাইয়ের বিজনেস ম্যাগনেট আরাভ খান। কয়েকদিন আগেও ঢাকায় ঘুরে গেছে সে। গুলশানের একটি হোটেলে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও আলোচিত হিরো আলমের সঙ্গে বৈঠক করে দুবাই ফিরে যায়। এর পর পুলিশ জানতে পারে এই সেই আরাভ খান, যে পুলিশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি।
বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে অপরাধ জগতে যার অবাধ পদচারণা সেই আরাভ খানকে এবার দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়ার কথা বলছে পুলিশ। অথচ দেশে অবস্থানকালে তাকে ধরতে পারেনি। এখন তাকে গ্রেফতারে নড়েচড়ে বসেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলকে কাজে লাগানোর কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু আরাভ খানকে কি আদৌ দেশে আনা সম্ভব?- এমন প্রশ্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদেরও।
আরাভ খান বাংলাদেশি হলেও পাসপোর্ট অনুযায়ী এখন সে ভারতীয় নাগরিক। অন্য দেশের নাগরিককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি না তা ভাবা দরকার। আরাভ বর্তমানে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বাস করছেন। সেখানেই গড়ে তুলেছেন বিশাল ব্যবসা। ওই দেশটির কাছেও সে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত। কাজেই বাংলাদেশ শত চেষ্টা করেও আরব আমিরাতকে বোঝাতে পারবে না যে- সে বাংলাদেশি, তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হোক। বরং ওই দেশের সরকার এটাই বলবে যে, আরাভ খান যেহেতু ভারতীয় নাগরিক, তাই ওই দেশটি চাইলেই কেবল ফেরত দেওয়ার কথা চিন্তা করা যেতে পারে। কিন্তু ভারত সরকার আদৌ কি আরাভ খানকে ফেরত চাইবে?
একই ঘটনা ঘটেছিল দুবাইয়ে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের ক্ষেত্রেও। জিসান দুবাই সিআইডির কাছে ধরা পড়ার পড়েও ফেরত আনতে পারেনি। ওই সময় জিসানকে ফেরত আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নানা কথা বললেও পরবর্তী সময়ে বিষয়টি ঢাকা পড়ে যায়। জিসানও ওই সময় দুবাইয়ের গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে ছাড়া পায়। বর্তমানে সে রীতিমতো আন্ডার ওয়ার্ল্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। জিসানকে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি; কারণ, সেও ছিল ভারতীয় পাসপোর্টধারী। একইভাবে আরাভ খানের ক্ষেত্রেও এটা হতে পারে। কারণ, সেও ভারতীয় পাসপোর্টধারী।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাভ খান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মতিউর রহমান মোল্লা। যদিও আরাভ ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করেই গত কয়েক বছর ধরে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তার ভারতীয় পাসপোর্ট নম্বর ইউ ৪৯৮৫৩৮৯। ওই পাসপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে।
শুধু তাই নয়, তার স্ত্রী ভারতীয় নাগরিক (আসাম) সাজেমা নাসরিনের পাসপোর্টটিও ভারতীয়। আরাভের কথিত বাবা-মা জাকির খান ও রেহানা বিবি খানের পাসপোর্টেও উভয়ের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে কন্দর্পপুর, উদয় সংঘ ক্লাব, রাজপুর-সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা-৭০০০৮৪।
বুধবার (১৬ মার্চ) আরব আমিরাতের দুবাই সিটিতে আরাভ খানের সোনার দোকান উদ্বোধন করেন বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে আলোচিত হিরো আলমও। মূলত আরাভ খানের নিমন্ত্রণেই সাকিব আল হাসান ও হিরো আলম বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে গেছেন।
আরাভ খান কে? তার পরিচয় কী? সম্প্রতি এ নিয়ে মুখ খুলেছে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। পুলিশ জানায়, এই আরাভ খানই ২০১৮ সালে বনানী পুলিশের এসবি শাখার পরিদর্শক মামুনের হত্যাকারী।
পুলিশের সাবেক এক আইজিপি সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুব সহজে এটি সম্ভব হবে না। কারণ, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে চালাতে শেষে গিয়ে আর পেরে ওঠা যায় না। এরকম বহু হত্যাকারী ও অপরাধী ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন। আরাভ খান হয়তো আলোচনায় এসেছে, তাই এতটা আলোচনা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ যদি ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সফল হয় সেক্ষেত্রে আরাভ খানকে তারা ফেরত আনার চেষ্টা করতে পারে। এর পর আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ভারতের কাছ থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তবে সেজন্য দীর্ঘ সময় ও জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’
বুধবার (১৬ মার্চ) ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আরাভ খান কীভাবে বিদেশে পালিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া তদন্তের স্বার্থে সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তাদের কাছ থেকেও জানা যাবে, আসলে আরাভ খানকে বাংলাদেশ থেকে কে কে সহায়তা করে, বা কার কার সঙ্গে লিঙ্কআপ রয়েছে।’
এদিকে, ডিবি সূত্রে জানা গেছে, আরাভ খানের সঙ্গে বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত অনেক পুলিশ কর্মকর্তার ব্যবসায়িক অংশীদার রয়েছে। এমনকি ওইসব অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুবাইয়ে গিয়ে সময়ও কাটিয়ে আসেন। সোনার যে চালান বাংলাদেশে আসে সেইসব চালানে সাবেক ওই কর্মকর্তারা সহযোগিতা করে থাকেন। এছাড়া গোপালগঞ্জের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও আরাভ খানকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে থাকেন।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম