Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আইনজীবী সমিতির নির্বাচন: হৈচৈ-হট্টগোলে ভোট পড়েছে ৪১৩৭

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২৩ ২২:৩২

ঢাকা: আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে বিক্ষোভ, ধাক্কাধাক্কি, হৈচৈ ও হট্টগোলের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) শেষ দিনেও দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে দুদফায় ধস্তাধস্তি ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। ভোটের শেষ দিনে ১ হাজার ৯২০ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আসাদুজ্জামান মনির।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মোট ভোটার ৮ হাজার ৬০২ জন। বুধবার (১৫ মার্চ) প্রথম দিনে ২ হাজার ২১৭টি ভোট পড়েছিল। এ নিয়ে গত দুই দিনে মোট ৪ হাজার ১৩৭ ভোট পড়েছে।

ভোটের দ্বিতীয় দিন: সকাল থেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এদিন সকাল ১০টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যা বিকেলে পাঁচটা পর্যন্ত চলে। আজ আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা ভোট প্রদান করলেও বিএনপিপন্থীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, মিছিল, ভোট গ্রহণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০২৩-২৪) এবারের নির্বাচন পরিচালনাকে ঘিরে পুলিশের হামলাসহ গতকাল বুধবার ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগে তুলে ধরেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এরপর আপিল বিভাগ তাদের খাস কামরায় ডাকেন।

প্রধান বিচারপতির কাছে যা বলেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা: সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন পরিচালনাকে ঘিরে পুলিশের হামলাসহ বুধবার ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের আপিল বিভাগে তুলে ধরেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা ১১টার সময় খাসকামরায় আসেন। তারপর বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে শেষ করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা বেলা ১২টার দিকে নির্বাচনী বুথের দিকে যেতে চাইলে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, হাতাহাতি হয়। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ভোটকেন্দ্রে ঢোকার জন্য বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেন। তবে প্রবেশপথে প্রতিহতের চেষ্টা করেন আওয়ামী লীগপন্থি আইনবীজীরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির চলে। এরপর বিকেল ৪টার দিকে আবার একই স্থানে দুপক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে বেশ কয়েকজন পড়ে গিয়ে আঘাত পান।

প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার পর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাকে প্রধান বিচারপতি ডেকেছিলেন, উনার কক্ষে গিয়েছিলাম। তখন আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতিরা বসে ছিলেন। উনারা আমাকে জানান, বিএনপি থেকে সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী কথা বলতে গিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটি সমিতির বিষয়, আমাদের করণীয় নেই। প্রধান বিচারপতির এখানে কিছু করার নেই। এটি আপনারা যারা এ বিষয়ে বিজ্ঞ আছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সবাই মিলে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার চেষ্টা করেন। যেহেতু এটি প্রাইভেট সংগঠন, সমিতির বিষয়। প্রধান বিচারপতির কিছু করার নেই।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ: গতকাল সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এদিন সকালে টেলিফোনে ডিএমপি কমিশনার ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশুতোষ সরকারের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এ সময় ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন ডিএমপি কমিশনার বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়টি দেখা হবে। এ সময় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশিদ ল রিপোর্টার্স ফোরামে উপস্থিত ছিলেন।

পরে তিনি বলেন, গতকালের ঘটনায় আমরা দুঃখিত। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা পুরোপুরি অনিচ্ছাকৃত। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য পুলিশ সচেষ্ট থাকবে।

যে কারণে বিরোধের সূত্রপাত:

গত ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) ২০২৩-২০২৪ সেশনের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নোটিশ দেয় সমিতির সম্পাদক মো. আবদুন নূর দুলাল। নোটিশে ১৫ ও ১৬ মার্চ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।

এরপর ১৫ ও ১৬ মার্চ অনুষ্ঠেয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল আইনজীবী শাহ খসরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন উপ কমিটি ঘোষণা করে।

এ ঘটনায় বিএনপি সমর্থিত প্যানেল আইনজীবী এ জেড এম ফরিদুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনার উপ কমিটি ঘোষণা করে।

এরপর গত ২ মার্চ উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি পুর্নগঠন করা হয়। কিন্তু সোমবার মনসুরুল হক চৌধুরী পদত্যাগপত্র করেন।

এই পদত্যাগের ঘোষণার পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সমিতি প্রাঙ্গণে নির্বাচন পরিচালনার উপ-কমিটি প্রধান কে হবেন তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তাপ ছড়ায়।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. মনিরুজ্জামানকে মনোনীত করেন।

অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এ এস এম মোকতার কবির খানকে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক মনোনীত করেন।

তবে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা তাদের মনোনীত নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির অধীনে নির্বাচন আয়োজনে অনড় অবস্থানে নেয়। একই সঙ্গে ভোট গ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। পাশাপাশি ব্যালট পেপার ছাপিয়ে সমিতির কনফারেন্স রুমে সংরক্ষণ করে।

এমন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে আইনজীবী সমিতি ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের অভিযোগ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা কনফারেন্স রুমের তালা ভেঙে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে এবং ছিনতাই করেছে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে বিএনপিপন্থী শতাধিক আইনজীবীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করে।

এরপর গতকাল নির্বাচনের প্রথম দিনে হইচই, হট্টগোল, বিক্ষোভ, দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাংচুর ও পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।

এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়। গতকালের ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করে।

তবে দুটি মামলায় বিএনপির ২১ আইনজীবী হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে ২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৬০২ জন আইনজীবী।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর