ফের হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল, কমছে বিমান ভাড়াও
১৬ মার্চ ২০২৩ ২২:২২
ঢাকা: নির্ধারিত কোটা পূরণ না হওয়ায় হজ নিবন্ধনের সময় আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এবার নিবন্ধনের সময় আরও পাঁচ দিন বাড়িয়ে ২১ মার্চ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ জারি করেছে। মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র হজ। সেই হিসাব ধরলে এখন নিবন্ধন শেষ করে ভিসা প্রক্রিয়া শুরুর কথা। কিন্তু এবারের হজ যাত্রার চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। বার বার সময় বাড়িয়েও হজে যেতে মুসল্লি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কোটা পূরণ না হওয়ায় আরেক দফা সময় বাড়ানো হলো।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের নির্ধারণ করা কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। বরাবরের মতো এবারও সরকারি বেসরকারিভাবে আলাদা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর একদিন পর ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।
সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা। চলতি বছর হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হয় গত ৮ ফেব্রুয়ারি। ২৩ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধনের শেষ সময় থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করা হয়। এই সময়ের মধ্যে কোটার বিপরীতে কম সংখ্যক হজযাত্রী নিবন্ধিত হওয়ায় ফের ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এর পরও কোটার অর্ধেক যাত্রী নিবন্ধন না করায় ফের ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ায় মন্ত্রণালয়। কোটা পূরণ না হওয়া আগামী ২১ মার্চ পর্যন্ত চতুর্থ দফা সময় বাড়ানো হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোটা পূরণ না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৬ মার্চ রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ব্যালোটি, নন ব্যালোটি মিলিয়ে নিবন্ধন করেছে মাত্র ১ লাখ ১১ হাজার ১৩ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৬৮৪ জন আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন। সেই হিসাবে কোটা পূরণ হতে এখনো বাকি ১৪ হাজার হজযাত্রী। যদিও ১৬ মার্চ দুপুরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম জানিয়েছিলেন, এখনো যে সময় আছে তাতে কোটা পূরণ হতে পারে। হোক বা না হোক এই সংখ্যক যাত্রী নিয়েই হজের প্রস্তুতি নিতে হবে।
এদিকে, হজ প্যাকেজের মূল্য কমাতে হাইকোর্টে রিট হয়। সেখানে বাংলাদেশ বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়াও যেকোনো এয়ারলাইন্সে টিকিট কেটে হজে যাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স ছাড়া অন্য কোনো বিমানে হজ যাত্রী যাওয়ার সুযোগ না রাখা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ বেশি নেওয়ার ঘটনাকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়কে একটি অথর্ব মন্ত্রণালয় বলেও মূল্যায়ন করেন আদালত। এ সময় হজের খরচ বাড়ার বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
বিষয়টি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণে একটি আদেশ জারি করে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীনের সই করা নোটিশে বলা হয়, ‘২০২৩ সালের হজ যাত্রীদের বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৯ টাকা নির্ধারণ করে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর থেকেই হজ যাত্রী, হজ এজেন্সি, বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্রতি নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য আসতে থাকে। অতিরিক্ত বিমান ভাড়ার কারণে হজ নিবন্ধন প্রক্রিয়াও শেষ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিটও হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টও বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও এ বিষয়ে সুপারিশ করেছে। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সুষ্ঠুভাবে হজ পালনের স্বার্থে বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে, গত ১৫ মার্চ বুধবার এবার হজ প্যাকেজ ব্যয় বাড়ার সাত কারণ দেখিয়ে হাইকোর্টকে তথ্য দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। সেখানে বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়া, রিয়াল বিনিময় বৃদ্ধি, মোয়াল্লেম ফিসহ এমন সাত কারণ দেখানো হয়।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম