Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১৭ মার্চ ১৯৭১: দিনে বৈঠক, রাতে ইয়াহিয়ার নীল নকশা

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৮

ঢাকা: ১৭ মার্চ ১৯৭১। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বৈঠকে উভয় পক্ষের পরামর্শদাতারা যোগ দেন। আওয়ামী লীগ নেতারা জনসাধারণের গণতান্ত্রিক রায়ের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেন এবং ছয় দফার ভিত্তিতে প্রস্তাবিত সংবিধান প্রণয়নের যৌক্তিতা তুলে ধরেন।

বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আলোচনা শেষ হয়নি। পরবর্তী বৈঠকের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

বিজ্ঞাপন

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বঙ্গবন্ধু নিজের বাসভবনে পৌঁছানোর পর সাংবাদিকরা জানতে চান বৈঠক সংক্ষিপ্ত হল কেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু মৃদু হাসেন। এক বিদেশি সাংবাদিক বলেন, ‘এই হাসি থেকে আমরা কি কিছু অনুমান করে নিতে পারি? জবাবে শেখ মুজিব বলেন, ‘আপনার মুখেও তো মৃদু হাসি। আমি জাহান্নামে বসেও হাসতে পারি।’

ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বঙ্গবন্ধু সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো বলেছি নরকে বসেও আমার চিত্তে সুখের অভাব হবে না। আমার চেয়ে বেশি সুখী আর কে আছে? সাত কোটি মানুষ আজ আমার পেছনে পাহাড়ের মত অটল। আমার জনগণ যা দিয়েছে তার তুলনা নেই।’

জন্মদিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলাপে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমরা জন্মদিনই কী আর মৃত্যুদিনই কী? জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। আপনারা আমার জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোনো মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে।’

রাতে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া-টিক্কা খান স্বল্পকালীন বৈঠক করেন। রাত ১০টায় গভর্নর টিক্কা খান জিওসি মেজর জেনারেল খাদেম হোসেন রাজকে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ঢাকায় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন খাদেম হোসেন রাজ। সেই বৈঠকে প্রণিত হয় বাঙালি হত্যার নীল নকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট।’

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, ‘পূর্ববাংলা এখন স্বাধীন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এখন স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। আমার ৮৯ বছরের জীবনে সবকটি আন্দোলনের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম। কিন্তু একটি সার্বজনীন দাবিতে জনগণের মধ্যে বর্তমান সময়ের মতো একতা ও সহযোগিতা আমি এর আগে কখনও দেখিনি।’

অসহযোগ আন্দোলনের ১৬তম দিনে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানসহ বিভিন্ন এলাকায় কুচকাওয়াজ ও রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ শুরু করে। স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসকে প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন পূর্ববাংলা জুড়ে সরকারি-বেসরকারি ভবনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা।

লাহোরে পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকরা পৃথক পৃথক বিবৃতিতে দুই অংশের দুইটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সংক্রান্ত ভুট্টোর প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাধারণ নির্বাচন গোটা দেশের জন্য হয়েছে। দুই অংশের জন্য পৃথক পৃথক নির্বাচন হয়নি। কাজেই জাতীয় পরিষদে একটি মাত্র মেজরিটি পার্টি থাকবে। ভুট্টোর প্রস্তাব পাকিস্তানকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।’

সারাবাংলা/এজেড/এমও

১৭ মার্চ ১৯৭১ নীল নকশা